‘‌আমার আম্মু কই, আম্মুকে দেখব’

সড়ক দুর্ঘটনার পর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে মায়ের মরদেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন নাহিদা। একই সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি নিজেও আহত হন
ছবি: প্রথম আলো

মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের একটি কক্ষে বসেছিলেন নাহিদা (১৮)। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন আর কাঁদছিলেন। এদিক–ওদিক তাকিয়ে বলছিলেন, ‘‌‌আমার আম্মু কই, আমার আম্মুকে দেখব।’ সঙ্গে থাকা দুজন তরুণ নাহিদাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলছিলেন, তাঁর মা ভালো আছেন।

খানিক পরেই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পুলিশে সাদা ব্যাগে একটি লাশ আসে। এ সময় নাহিদাকে জরুরি বিভাগের ভেতর দিয়ে অস্ত্রোপচারকক্ষে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। সাদা ব্যাগ দেখে সন্দেহ হয় তাঁর। ব্যাগের এক প্রান্তে খোলা অংশ দিয়ে তাকিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে নাহিদা বলেন, ‘‌আমার আম্মুর এমন অবস্থা কেন, আম্মুকে জড়ানো কেন।’ তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার আর কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলেন না সেখানে থাকা কেউ।

নাহিদার মায়ের নাম হেলেনা খাতুন (৪৫)। বাড়ি রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার মেঘনা গ্রামে। সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে আজ শুক্রবার কুষ্টিয়া শহরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাচ্ছিলেন তাঁরা। সঙ্গে ছিল হেলেনার আরেক মেয়ে ও নাতনি। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কে রাজবাড়ীগামী একটি দ্রুতগামী ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় অটোরিকশাটির। ঘটনাস্থলেই প্রাণ যায় হেলেনার। তাঁর এক মেয়ে ও নাতনির অবস্থাও গুরুতর।

পুলিশ বলছে, এ দুর্ঘটনায় অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দুজনের অবস্থা খুবই গুরুতর। তাঁদের সবাইকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। পরে সেখানে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাব্বিরুল আলম বলেন, মরদেহটি কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে। তবে ট্রাকের চালক পালিয়ে গেছেন।