আম উৎসবে শতাধিক প্রজাতির আমের প্রদর্শনী

আম উৎসবে বিভিন্ন প্রজাতির আম ঘুরে দেখছেন দর্শনার্থীরা। আজ বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার হরিপুর মহল্লায়
ছবি: প্রথম আলো

আমের রাজ্য চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাহারি সব আম। তা নিয়েই আম উৎসব। আয়োজন করেছিল ‘সম্প্রীতি’ নামের একটি সামাজিক সংগঠন। উৎসবে নানা রং ও বর্ণের নজরকাড়া শতাধিক প্রজাতির সুস্বাদু আমের প্রদর্শনী হয়, যার অধিকাংশই বিলুপ্তপ্রায় জাতের। সঙ্গে ছিল আম খাওয়া প্রতিযোগিতা, গুণীজন সম্মাননা, পুরস্কার বিতরণ ও আলোচনা সভা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার হরিপুর মহল্লায় আজ শনিবার বেলা সাড়ে তিনটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এই আয়োজন।

আম প্রদর্শনীতে বিলুপ্তপ্রায় জাতের মধ্যে ছেলেভুলানি, বউভুলানি, মিছরিদানা, বৃন্দাবনী, দুধসর, কিষানভোগ, মোহনভোগ, বাতাসা, টিক্কাফরাস, চন্দ্রমুখী, মধুচুষকি, কাঞ্চনকুমারী, পোল্লাদাগি, সুরমাগুটি, ভুটভুটি, ঘুরঝুরকি, মিছরিকান্ত, ফনিয়া, চিনিদাগি, রানিপসন্দসহ জনপ্রিয় বাণিজ্যিক জাতের আম মিলিয়ে ১১৩ প্রজাতির আম ছিল। এর মধ্যে প্রায় দুই কেজি ওজনের বিদেশি প্রজাতির ব্রুনাই কিং আমও দেখা গেছে।

সম্প্রীতির সভাপতি নাহিদুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ শংকর কুমার কুণ্ডু। অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন চিকিৎসক আবদুস সালাম, ফলচাষি মতিউর রহমান, জাগো নারী বহ্নিশিখার সভাপতি ফারুকা বেগম প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, নতুন প্রজন্ম এসব আম যেমন চোখে দেখেনি, তেমনি এসব আমের নামও জানে না। এ আয়োজনের মাধ্যমে তাঁরা এগুলো দেখলেন ও চিনলেন।

বক্তারা বলেন, আমের সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসীর নাড়ির সম্পর্ক। চাঁপাইনবাবগঞ্জের অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে আমের ভূমিকা ব্যাপক। এ অনুষ্ঠানে যেসব বাহারি রঙের আম প্রদর্শিত হয়েছে, তার অধিকাংশই বিলুপ্তপ্রায় জাতের। নতুন প্রজন্ম এসব আম যেমন চোখে দেখেনি, তেমনি এসব আমের নামও জানে না। এ আয়োজনের মাধ্যমে তাঁরা এগুলো দেখলেন ও চিনলেন। আমের বৈচিত্র্য সম্পর্কে ধারণা পেলেন। এ জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান বক্তারা।

সেরা আম খাদক প্রতিযোগিতায় আম খেতে ব্যস্ত প্রতিযোগীরা। আজ চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার হরিপুর মহল্লায়
ছবি: প্রথম আলো

এ অনুষ্ঠানে সম্মাননা দেওয়া হয় মহানন্দা প্রবীণ নিবাসের সভাপতি চিকিৎসক আবদুস সালাম, জেলার কৃতী ফলচাষি ও মনামিনা কৃষি খামারের প্রতিষ্ঠাতা মতিউর রহমানকে। আম খাওয়া প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকারী রেজিনা বেগম (৫০), দ্বিতীয় স্থান অধিকারী আনারুল ইসলাম (৩৫) ও তৃতীয় স্থান অধিকারী রেহেনা পারভিনকে (৪২) পুরস্কার দেওয়া হয়। সেরা আম প্রদর্শনকারী হিসেবে আরিফ রেজা ও শহীদুল ইসলামকেও পুরস্কৃত করা হয়।

আম খাওয়া প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকারী রেজিনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আম খাদক হিসেবে পরিবারে ও আশপাশে আমার একটা পরিচিতি আছে। সম্প্রীতি আয়োজিত এর আগে আম উৎসবে আম খেয়ে আমি প্রথম হয়েছিলাম। করোনার কারণে দীর্ঘ দুই বছর আম উৎসব হতে পারেনি। তাই অনেক আগ্রহ নিয়ে এ দিনটির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। মহল্লার নারী-পুরুষ, শিশু, সবাই মিলে অনেক আনন্দও পেয়েছি। আমের বাহারি সব রঙে আমাদের মনেও রং লেগেছে। আমরা চাই, প্রতিবছর আরও বড় পরিসরে এ উৎসব হোক।’

উৎসবে আসা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা জজকোর্টের অতিরিক্ত কৌঁসুলি আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, ‘উৎসবে এসে অনেক আনন্দ পেয়েছি। আমার দাবি থাকবে, বিলুপ্তপ্রায় আমগুলো টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম গবেষণা কেন্দ্র ও কৃষি বিভাগ।’