দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল
আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন নষ্ট, বেড়েছে খরচ
তিন বছর আগে আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন বরাদ্দ হয়। ইতিমধ্যে চারবার মেরামত করতে হয়েছে। ১ মাস ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে।
দিনাজপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ডের ২ নম্বর শয্যায় চিকিৎসাধীন হাসান আলী (৬২)। চিকিৎসক জানিয়েছেন পিত্তথলিতে পাথর হয়েছে। অস্ত্রোপচারের জন্য গত বৃহস্পতিবার এখানে ভর্তি হয়েছেন তিনি। এরপর চিকিৎসক প্রথমে আলট্রাসনোগ্রাম করার পরামর্শ দেন। কিন্তু হাসপাতালের মেশিন নষ্ট। বাধ্য হয়ে হাসান আলীর স্বজনেরা একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তাঁর আলট্রাসনোগ্রাম করিয়েছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এখানে রোগীর পুরো পেট আলট্রাসনোগ্রাম করলে সরকারি ফি হিসেবে জমা দিতে হয় ২২০ টাকা। আর পেটের একাংশের জন্য ১১০ টাকা। মেশিন নষ্ট হওয়ায় বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সেই পরীক্ষা করাতে হাসান আলীর খরচ হয়েছে ৮৩০ টাকা।
হাসান আলী পেশায় বর্গাচাষি। বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জে। দীর্ঘদিন ধরে পেটের অসুখে ভুগছেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে চিকিৎসক তাঁকে রক্তের একটি পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন। মুশকিল হয় এই পরীক্ষাও হাসপাতালে হবে না। বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ৮০০ টাকা খরচে এই পরীক্ষাটিও করিয়েছেন হাসান। নানা ধরনের পরীক্ষা–নিরীক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন ইনজেকশন ও ওষুধও বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে হাসান আলীকে। চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে বিপাকে পড়েছেন তাঁর স্বজনেরা।
২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চিকিৎসক জানান, তিন বছর আগে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় এই হাসপাতালে চায়না কোম্পানির একটি আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন বরাদ্দ দেয়। মেশিনটির ওয়ারেন্টি এখনো শেষ হয়নি। ইতিমধ্যে চারবার নষ্ট এবং তা মেরামতও করা হয়। ১ মাস ধরে যন্ত্রটি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে।
এই চিকিৎসক আরও বলেন, হাসপাতালে জেনারেটরও নেই। মাঝেমাধ্যে এমনও হয় রোগীর অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি চলছে, ওই সময় বিদ্যুৎচলে গেছে। অথচ হাসপাতালে প্রতি সপ্তাহে গড়ে অর্ধশত প্রসূতি, অর্থোপেডিকস ও সাধারণ সার্জারি করা হয়।
আরেক রোগী খানসামা উপজেলার কুমুরিয়া গ্রামের আজিজুল হক (৫০) জানান, দুই দিন আগে হার্নিয়ার অপারেশনের জন্য ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে আলট্রাসনোগ্রামসহ ২ হাজার ৬০০ টাকার বিভিন্ন পরীক্ষা বাইরে থেকে করাতে হয়েছে তাঁকে।
এসব বিষয়ে দিনাজপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক নজমুল ইসলাম বলেন, নষ্ট হওয়া আলট্রাসনোগ্রাম মেশিনটি খুব দ্রুতই মেরামত হয়ে যাবে। নতুন একটি মেশিনের চাহিদাপত্রও মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আর জেনারেটর বসানোর কাজও শুরু হয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকলেও পুরো হাসপাতাল এই জেনারেটরের আওতায় আসবে।
ওষুধ বাইরে থেকে কেনার বিষয়ে নজমুল ইসলাম বলেন, অধিকাংশ ওষুধ হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা হয়। তবে রোগের ধরনভেদে কিছু ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়। এটা খুব সামান্য পরিমাণে।