সাবেক সাংসদের ছেলেকে কুপিয়ে জখম

নাটোর–৩ আসনের সাবেক সাংসদ ইয়াকুব আলীর ছেলে আশিক ইকবাল।
ছবি: সংগৃহীত

হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে ও ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে নাটোর-২ (সিংড়া) আসনের সাবেক সাংসদ ইয়াকুব আলীর ছেলেকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় বগুড়ার নন্দীগ্রামের রনবাঘা বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের তিন কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁদের আজ শনিবার কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের এক পক্ষের জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার জের ধরে অপর পক্ষ ওই হামলা চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আহত ব্যক্তি হলেন আশিক ইকবাল (৪৫)। তিনি সিংড়ার সুকাশ ইউনিয়নের লক্ষ্মীখোলা গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর বাবা ইয়াকুব আলী ১৯৮৬ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাংসদ হন। পরে তিনি জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন।

সাবেক সাংসদ ইয়াকুব আলীর ছেলে আশিক ইউনিয়ন পরিষদের গত নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। তাঁকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর ওপর হামলা চালানোর ঘটনায় গ্রেপ্তার তিনজন হলেন লক্ষ্মীখোলা গ্রামের বাসিন্দা হাশিম আলী (২৩), মুন্নাফ আলী (৩২) ও রবিউল ইসলাম (২৪)।

নন্দীগ্রাম থানা-পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, আশিক গতকাল সন্ধ্যায় সিংড়ার লক্ষ্মীখোলা গ্রামের পাশে নন্দীগ্রামের রনবাঘা বাজারে চা খাচ্ছিলেন। এ সময় ছয় থেকে সাতজন তাঁর ওপর হামলা করেন। ধারাল অস্ত্র দিয়ে তাঁকে কোপানো হয়। হাতুড়ি দিয়েও আঘাত করা হয়। এ সময় বাজারের লোকজন হাশিম, মুন্নাফ ও রবিউলকে আটক করে পুলিশে দেন। লোকজন আশিককে উদ্ধার করে প্রথমে সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠান। সেখান থেকে তাঁকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

ওই ঘটনায় আশিকের ছোট ভাই ইখতেখার আলম নন্দীগ্রামের সুকাশ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হালিম মো. হাসমত আলী ও গ্রেপ্তার তিনজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ছয়-সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
হামলায় আহত নাটোর–৩ আসনের সাবেক সাংসদ ইয়াকুব আলীর ছেলে আশিক ইকবাল। গতকাল সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
ছবি: সংগৃহীত

সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা শিরিন আকতার বলেন, ইকবালের মাথার আঘাত গুরুতর।
শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ জানান, ইকবালের মাথায় বেশ কিছু সেলাই লেগেছে। তবে তিনি এখন আশঙ্কামুক্ত।
ওই ঘটনায় আশিকের ছোট ভাই ইখতেখার আলম নন্দীগ্রামের সুকাশ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হালিম মো. হাসমত আলী ও গ্রেপ্তার তিনজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ছয়-সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। ইখতেখার বলেন, তাঁর ভাই আশিক সিংড়া পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামের সমর্থক। অন্যদিকে হাসমত আলী সাংসদ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদের সমর্থক। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ ওহিদুর রহমান এ পক্ষের নেতৃত্ব দেন।

আশিকের ছোট ভাই ইখতেখার আলম অভিযোগ করে বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে গত বুধবার শফিকুলের পক্ষে শোক সভার আয়োজন করেন। এতে আশিক কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে যোগ দেন। এতে হাসমতের পক্ষের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ হন। এর জের ধরে আশিককে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসমত আলী বলেন, তাঁরও বাড়ি লক্ষ্মীখোলা গ্রামে। দিন পাঁচেক আগে জমিতে ঘাস কাটা নিয়ে বিবাদের জের ধরে আশিকের নেতৃত্বে তাঁর পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা হয়। এ ঘটনায় আশিককে আসামি করে থানায় মামলা হয়েছে। ওই ঘটনার জের ধরে শুক্রবার রনবাঘা বাজারে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে। এর সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্টতা নেই। রাজনৈতিকভাবে ঘায়েল করতে তাঁকে ষড়যন্ত্রমূলক এ মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নন্দীগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত কবীর বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া তিনজনকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাতে বিষয়টি রাজনৈতিক বিরোধের জের ধরে ঘটেছে বলে জানা গেছে। তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।