আশাশুনিতে বেড়িবাঁধে ধস, আতঙ্কিত ৩ ইউনিয়নের বাসিন্দারা

আশাশুনি উপজেলার কোকবাসিয়া খেয়াঘাটের দক্ষিণে বেড়িবাঁধের ধস মেরামত করছেন এলাকাবাসী
ছবি: প্রথম আলো

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা, আনুলিয়া ও প্রতাপনগর ইউনিয়নে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বিভাগ-২) নির্মিত বেড়িবাঁধের কয়েকটি স্থানে ধস ও ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে ওই তিন ইউনিয়নের গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

২০২০ সালের ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও ২০২১ সালের ২৩ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আঘাত হানলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাঁধ ভেঙে খোলপেটুয়া নদীর পানিতে প্রতাপনগর ইউনিয়নের ১৯টি গ্রামের মধ্যে ১৭টি ও শ্রীউলা ইউনিয়নের ২১টি গ্রাম তলিয়ে যায়। ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও আম্পানে বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গিয়েছিল আনুলিয়া ইউনিয়নে ১৮টি গ্রামের মধ্যে ১৬টি। এতে এসব গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। প্রায় দেড় বছর পর গত নভেম্বরে পরিস্থিতি সামাল দিতে রিং বাঁধ দেয় পাউবো। এরপর লোকালয়ে নদীর পানি ঢোকা বন্ধ হয়। কিন্তু এসব গ্রামের অনেকেই এখনো ঘর তৈরি করে বাস্তুভিটায় ফিরতে পারেনি। এ অবস্থায় বেড়িবাঁধে নতুন করে ধস ও ফাটল দেখা দেওয়ায় গ্রামবাসী আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।

গত শনিবার দুপুরে জোয়ারে খালপেটুয়া নদীর পানি তিন-চার ফুট বৃদ্ধি পায়। এতে পানির তোড়ে কোকবাসিয়া খেয়াঘাটের দক্ষিণে বেড়িবাঁধে হঠাৎ করে ধস শুরু হয়। শ্রীউলা ইউনিয়নের পুঁইজালা গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, আধা ঘণ্টার মধ্যে ৭০-৭৫ ফুট বাঁধ ধসে বিপজ্জনক আকার ধারণ করে। এ সময় মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা দিয়ে বাঁধের ধস ও ফাটল রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান দীপঙ্কর বাছাড়ের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ মেরামতের কাজ করা হয়। এখন পর্যন্ত লোকালয়ে পানি না ঢুকলেও স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

একই অবস্থা আনুলিয়া ইউনিয়নের নয়াখালী এলাকার বেড়িবাঁধের। নয়াখালী গ্রামের আবদুস সামাদ বলেন, ওই এলাকার বেড়িবাঁধের কয়েকটা স্থানে শনিবার ফাটল দেখা দেয়। রোববার স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল কুদ্দুস ও ইউপি সদস্য আলাউদ্দিন গাজীর নেতৃত্বে স্বেচ্ছাশ্রমে সেখানে বাঁধ মেরামত করেছেন স্থানীয় লোকজন।
এ ছাড়া খোলপেটুয়া নদীর পানির তোড়ে প্রতাপনগর ইউনিয়নের কুড়িকাউনিয়া এলাকায় বাঁধের কয়েকটি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

শ্রীউলা ইউপি চেয়ারম্যান দীপঙ্কর বাছাড় বলেন, গ্রামবাসীকে নিয়ে পুঁইজালা এলাকায় বেড়িবাঁধের কয়েকটি স্থানে ধস ও ফাটল মেরামতের চেষ্টা করেছেন তিনি। তবে নদীতে পানির স্রোত বেশি হলে ঝুঁকিপূর্ণ এ বাঁধ রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। দ্রুত বাঁধ মেরামতের জন্য পাউবো কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

সাতক্ষীরা পাউবোর (বিভাগ-২) নির্বাহী প্রকৌশলী শামিম হুসাইন মাহমুদ বলেন, শ্রীউলা, আনুলিয়া ও কুড়িকাউনিয়ার ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ এলাকা পরিদর্শন করেছেন তিনি। ওই সব এলাকায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে বাঁধ মেরামতে কাজ শুরু করা হবে।