আশ্রয়কেন্দ্রে আলেখার কোলজুড়ে এল ফুটফুটে প্লাবন

মা আলেখার কোলে আশ্রয়কেন্দ্রে জন্ম নেওয়া নবজাতক প্লাবন। বুধবার মৌলভীবাজারের জুড়ী মডেল উচ্চবিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে
ছবি: প্রথম আলো

বন্যায় তলিয়ে গেছে বসতবাড়ি। চার দিন আগে জুড়ী মডেল উচ্চবিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠেন প্রসূতি আলেখা বেগমসহ (৩৫) পরিবারের অন্য সদস্যরা। আজ বুধবার সকালে ওই আশ্রয়কেন্দ্রে আলেখার কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে এক ছেলেসন্তান। নবজাতকের নাম রাখা হয়েছে প্লাবন। আলেখাদের বাড়ি মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সদর জায়ফরনগর ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামে। তাঁর স্বামী সোহেল মিয়া ভাড়ায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান। তাঁদের আরও এক ছেলে ও দুই মেয়ে আছে।

দুপুরে আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, নবজাতককে কোলে নিয়ে বসে আছেন আলেখা। আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেওয়া বানভাসি বিভিন্ন বয়সী মানুষ নবজাতককে দেখতে ভিড় করেছে। খবর পেয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রসূতি ও নবজাতককে দেখতে আসেন। তাঁরা মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা ফারহানা রহমান বলেন, তাঁরা নবজাতক ও প্রসূতির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন, উভয়ই সুস্থ আছে। তাঁদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়েছে।

আলেখার স্বামী সোহেল মিয়া অভিযোগ করেন, গত সোমবার দিবাগত রাত পৌনে দুইটার দিকে তাঁর স্ত্রী প্রথমবার প্রসবব্যথা অনুভব করেন। জুড়ী থানা-পুলিশের সহযোগিতায় দ্রুত তাঁকে পুলিশের ভ্যানে করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। কিন্তু বিদ্যুৎ, পানি, নার্স না থাকার কথা বলে রোগীকে পাশের কুলাউড়া বা বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যেতে বলেন সেখানকার দায়িত্বরত এক চিকিৎসক। কিন্তু কুলাউড়া বা বড়লেখায় যাওয়া সম্ভব ছিল না। কারণ, বিভিন্ন এলাকার সড়ক বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। এ ছাড়া গভীর রাত হওয়ায় বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করেও কোনো গাড়ির ব্যবস্থা করতে পারেননি। তেলসংকটে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স বিকল হয়ে পড়ে আছে বলে জানান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের লোকজন। নানা দুশ্চিন্তায় সেখানেই রাত কাটে তাঁদের। পরদিন মঙ্গলবার সকালে তাঁরা আশ্রয়কেন্দ্রে ফিরে আসেন।

সোহেল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রে আসার পর ছালেহা বেগম নামের তাঁদের পরিচিত এক ধাত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁর সহযোগিতায় আলেখার সন্তান প্রসব হয়। তিনি বলেন, ‘বড় আশা করি সরকারি হাসপাতালে গিয়েছিলাম। কিন্তু ডাক্তারের কথাবার্তা শুনিয়া বড় কষ্ট পাইছি।’

জুড়ী মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিতাংশু শেখার দাস বলেন, তাঁরা নবজাতকের নাম রেখেছেন প্লাবন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সমরজিৎ সিংহ বলেন, বন্যাদুর্গত বিভিন্ন এলাকায় তাঁরা প্রতিদিন ছুটে যাচ্ছেন, বন্যার্ত মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন। প্রসূতি আলেখার স্বজনদের অভিযোগের বিষয়টি তাঁরা খতিয়ে দেখবেন।