আশ্রয়কেন্দ্রে দুধের জন্য কাঁদছে নবজাতক

নবজাতকের সঙ্গে তানিয়া বেগম
ছবি: প্রথম আলো

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর পৌর এলাকার বাসস্ট্যান্ড কলোনিতে ১৬ জুন দুপুরে সন্তানের জন্ম দেন তানিয়া বেগম। তবে ওই রাতেই তাঁদের ঘরে বন্যার পানি ওঠে। উপায় না পেয়ে পরের দিন সকালে নবজাতককে নিয়ে তানিয়া উপজেলা সদরের আবদুস সামাদ আজাদ অডিটোরিয়ামের আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠেন।

ওই দিন থেকে পাঁচ শতাধিক বন্যাকবলিত মানুষের সঙ্গে নবজাতককে নিয়ে তানিয়া আশ্রয়কেন্দ্রে থাকছেন। তবে ঠিকমতো বুকের দুধ না পাওয়ায় নবজাতককে নিয়ে তানিয়া বিপাকে পড়েছেন। হাতে টাকা–পয়সা নেই বলে দুধ কিনে খাওয়ানোর মতো সামর্থ্যও নেই বলে জানিয়েছেন তানিয়া।

খুব ছোটবেলায় তানিয়া মা-বাবার সঙ্গে জগন্নাথপুর আসেন। তবে তাঁদের বাড়ি নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার মঙ্গলসিট কাঁচাবাজার এলাকায়। জগন্নাথপুরে আসার পর তাঁর বাবা হাফিজ উল্যাহ পৌর শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আবদুল কাইয়ুমের কলোনিতে ভাড়াবাসায় থাকতেন। গত বছরের মার্চ মাসে একই কলোনিতে বসবাসকারী দিনমজুর ইলিয়াস মিয়ার (৪০) সঙ্গে তানিয়ার বিয়ে হয়।

আজ বুধবার দুপুরে আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, শিশুটি মায়ের কোলে বসে কাঁদছিল। মা তানিয়া শিশুটিকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। একফাঁকে তানিয়া বেগম বলেন, ১৬ জুন তাঁদের ঘরে পুত্রসন্তানের জন্ম হয়। ১৭ জুন সকাল থেকে তিনি আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন। অধিকাংশ সময় শিশুটি বুকের দুধ পাচ্ছে না। তাই সব সময়ই শিশুটি কাঁদছে।

তানিয়ার ননদ দুলন বিবি বলেন, ‘আমরা খুব কষ্টে আছি। একবার সামান্য চাল ও দুইবেলা শুকনা খিচুড়ি ছাড়া কিছু পাইনি। টাকার অভাবে বাচ্চাটাকে দুধ কিনে এনে খাওয়ানো যাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত মা ও ছেলে কোনো ধরনের ওষুধ বা চিকিৎসাও পায়নি।’

আশ্রয়কেন্দ্রের প্রতিবেশী ইয়ামিন বেগম বলেন, ‘নবজাতক ও মা চরম অপুষ্টিতে ভুগছেন। আমরা তাঁদের নিয়ে চিন্তিত। অভাব–অনটনের কারণে আমরাও কোনো সহযোগিতা করতে পারছি না। একটু সহযোগিতা পেলে মা ও শিশু ভালো থাকবে।

ঘটনাস্থলে কথা হয় জগন্নাথপুর পৌর শহরের ইকড়ছই গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘নবজাতক ও তার মাকে দেখে খুব কষ্ট লাগছে। দ্রুত তাঁদের চিকিৎসকের শরণাপন্ন করা গেলে ভালো হতো। আমি ব্যক্তিগতভাবে দুধ কেনার জন্য কিছু টাকা দিয়েছি।’

এ প্রসঙ্গে জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মধুসূদন ধর বলেন, হাসপাতালে নিয়ে এলে নবজাতক ও তার মায়ের সুচিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করা যাবে।