আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পাইয়ে দেওয়ার নামে চাঁদাবাজি

অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা নুর উদ্দিন
ছবি: সংগৃহীত

ফেনীর সোনাগাজীতে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পে ঘর পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে আওয়ামী লীগের স্থানীয় এক নেতা মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত নুর উদ্দিন উপজেলার চর দরবেশ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইউনিয়নের উত্তর চর চান্দিয়া এলাকার নুরুল আফসার নামের এক দিনমজুরের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা আদায়ের ৪ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ঘটনাটি জানাজানি হলে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল আফসারের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে তাঁকে এলাকা ছাড়া করার হুমকি দিচ্ছেন।

ভুক্তভোগী নুরুল আফসার বলেন, ঘর বরাদ্দ পেতে স্থানীয় ইউপি সদস্য জামশেদ আলমের সহযোগিতায় তিনি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উপজেলা প্রশাসনের কাছে জমা দেন। এর কিছুদিন পর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা নুর উদ্দিন তাঁকে জানান, ৪০০ লোক ঘর পাওয়ার জন্য আবেদন করলেও অনেক কষ্টে ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে তিনিসহ (নুরুল আফসার) ১৩ জনের ঘর পাওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করেছেন। ঘরের রেজিস্ট্রির প্রক্রিয়া চলছে, এখন ২০ হাজার টাকা না দিলে ঘর পাওয়া যাবে না। টাকা দিতে অস্বীকার করলে নুর উদ্দিন তাঁর ওপর ক্ষিপ্ত হন। পরে নুর উদ্দিন আবারও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে টাকা না দিলে ঘর অন্যদের নামে বরাদ্দ হয়ে যাবে বলে জানিয়ে দেন। পরে বাধ্য হয়ে তিনি স্থানীয় একটি বেসরকারি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে নুর উদ্দিনকে ১৫ হাজার টাকা দেন। বাকি টাকা পরে দেবে বলেন।

নুরুল আফসার আরও বলেন, গত মঙ্গলবার আদর্শগ্রাম এলাকায় উপজেলা প্রশাসন তাঁকে একটি ঘরের চাবি ও কাগজপত্র বুঝিয়ে দেয়। ওই দিন রাতে নুর উদ্দিন তাঁর কাছে আরও পাঁচ হাজার টাকা দাবি করে না পেয়ে গালমন্দ করেন।

একইভাবে পশ্চিম চর দরবেশ এলাকার কামাল উদ্দিন নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, তাঁকেও সরকারিভাবে ঘর পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে নুর উদ্দিন পাঁচ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তিনি ঘর পাননি।

আদর্শগ্রাম এলাকার বাসিন্দা সফি উল্যাহ ও সাহাব উদ্দিন বলেন, নুর উদ্দিন এলাকার বেশ কয়েবকজনের কাছ থেকে ঘর ও বয়স্ক ভাতা এবং প্রতিবন্ধী কার্ড করে দেওয়ার কথা বলে চাঁদা নিয়েছেন। তাঁদের দুজনের কাছ থেকেও ১০ হাজার করে ২০ হাজার টাকা নিয়েছেন। তাঁরা নুর উদ্দিনের বিরুদ্ধে সালিস বাণিজ্য ও মানুষকে হয়রানি করার অভিযোগ করেন।

আওয়ামী লীগ নেতা নুর উদ্দিন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, দলীয় দ্বন্দের জেরে প্রতিপক্ষের লোকজন তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার চালাচ্ছেন। তিনি কোনো চাঁদাবাজি ও সালিস বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত নন। ফেসবুকে চাঁদা দাবির অডিও ভাইরালের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সরাসরি কথা বলবেন বলে মুঠোফোনে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিখন বনিক বলেন, উপজেলার দক্ষিণ চর দরবেশ আদর্শগ্রাম আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৩৭টি পরিবারের কাছে ঘরের চাবি ও কাগজপত্র বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর আগে আরও ৪৭ পরিবারের কাছে ঘরের চাবি হস্তান্তর করা হয়। ঘর পেতে চাঁদাবাজির বিষয়ে তিনি অবগত নন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ এম জহিরুল হায়াত প্রথম আলোকে বলেন, ঘর পেতে চাঁদা আদায়ের বিষয়টি তিনি শুনেছেন। ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে সত্যতা পেলে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।