আয়া পদে চাকরি পেতে ছয় লাখ টাকা ঘুষ

বিদ্যালয়ের আয়া পদে চাকরি দিতে চাওয়া হয় ছয় লাখ টাকা। জমি বেচে ও উচ্চ সুদে ঋণ করে সে টাকা জোগাড় করেন নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার শাহানাজ বেগম। সম্প্রতি তিনি অভিযোগ তুলেছেন, এই টাকা নিয়েও চাকরি দেওয়া হয়নি তাঁকে। এখন ঋণের টাকা শোধ করতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন তিনি।

শাহানাজ বেগম ২৬ আগস্ট গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানায় পৃথক তিনটি অভিযোগ দিয়েছেন। এতে তিনি দাবি করেছেন, উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের সোনাবাজু উচ্চবিদ্যালয়ের আয়া পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে তাঁর কাছে থেকে টাকা নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক আবদুল মজিদ।

তবে এ বিষয়ে আবদুল মজিদ দাবি করেছেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ার খরচ হিসেবে তিনি তিন লাখ টাকা নিয়েছিলেন। পরে সে টাকা ফেরতও দিয়েছেন।

অভিযোগকারী শাহানাজ বেগম উপজেলার সোনাবাজু গ্রামের আছাদ সরদারের স্ত্রী। আছাদ সরদার পেশায় কৃষিশ্রমিক। গতকাল রোববার শাহানাজ বেগম বলেন, বিদ্যালয়ের পাশে তাঁর বাড়ি। প্রধান শিক্ষক আবদুল মজিদের সঙ্গে তাঁর পরিবারের ভালো সম্পর্ক। সরকারি চাকরি ও পরিবারের কথা ভেবে ছয় মাসে আগে দুই দফায় ছয় লাখ টাকা প্রধান শিক্ষককে দেন তিনি। টাকা দেওয়ার সময় তাঁর স্বামী আছাদ সরদার, চাচাশ্বশুর নাজিম উদ্দিন, সেন্টু সরদারসহ স্বজনেরা উপস্থিত ছিলেন।

শাহানাজ বলেন, ২৫ আগস্ট চূড়ান্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া হলেও আয়া পদে নিয়োগ দেওয়া হয় পাশের পাটপাড়া গ্রামের খোদেজা বেগম নামের এক নারীকে। খোদেজা বেগম প্রধান শিক্ষককের আত্মীয় বলে অভিযোগ করেন শাহানাজ। চাকরি না পাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন শাহানাজ বেগমের স্বজনসহ এলাকার লোকজন। পরে ছয় লাখের মধ্যে তিন লাখ টাকা ফেরত দেন প্রধান শিক্ষক।

প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক। সরকারি চাকরি ও পরিবারের কথা ভেবে ছয় মাস আগে দুই দফায় ছয় লাখ টাকা প্রধান শিক্ষককে দিয়েছি।
শাহানাজ বেগম, সোনাবাজু গ্রামের বাসিন্দা

শাহানাজ ও তাঁর স্বামী আছাদ সরদার অভিযোগ করেন, প্রধান শিক্ষকের আশ্বাসের কারণে শেষ সম্বল তিন কাঠা জমি বিক্রিসহ উচ্চ সুদে ঋণ করে ছয় লাখ টাকা প্রধান শিক্ষকের হাতে তুলে দেন। সুদ আর ধারের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে এখন তাঁদের খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে।

এ প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষক আবদুল মজিদ বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ার খরচ ও বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য শাহানাজ বেগমের কাছ থেকে ছয় লাখ নয়, তিন লাখ টাকা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিশেষ কারণে তাঁকে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে তিন লাখ টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে।

মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, চাকরি দেওয়ার কথা বলে টাকা নেওয়া অপরাধ। প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।