আয়ের পথ খুঁজছে আবিরনের পরিবার

আবিরন বেগম
ফাইল ছবি

বাবা আনছার সরদারের ছয় মেয়ের মধ্যে মেজ আবিরন বেগম (৪০)। বয়সের ভারে ন্যুব্জ মা–বাবার দিনমজুরির টাকা দিয়ে আর সংসার চলছিল না। এ কারণে তিনিও নেমে পড়েছিলেন রোজগারে। বাবার সঙ্গে দিনমজুরি করে অন্য বোনদের লেখাপড়া করিয়েছেন। বাবার সংসার দেখতে গিয়ে স্বামীর সংসারও হয়ে ওঠেনি তাঁর। সংসারে কিছুটা আর্থিক স্বস্তি আনতে পাড়ি জমিয়েছিলেন সৌদি আরব। কিন্তু সেখান থেকে লাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে তাঁকে।

আবিরন বেগমের বাড়ি খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি ইউনিয়নের রামনগর গ্রামে। তাঁকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে পরিবারটি। অন্য বোনগুলোর বিয়ে হয়ে গেলেও আর্থিকভাবে কেউই ভালো নেই। বাবা আনছার সরদারের বয়স প্রায় ৮০ বছর। এই বয়সে তিনি কোনো কাজও করতে পারেন না। আবিরন মারা যাওয়ার পর সরকার থেকে যে সামান্য আর্থিক সহায়তা পেয়েছিলেন, তা আনছার সরদারের চিকিৎসা ও অন্যান্য খরচ করতেই চলে গেছে। এখন তিনি নিঃস্ব।

সৌদি আরবে আবিরন হত্যা মামলার রায়ে অপরাধীরা শাস্তি পাওয়ায় খুশি তাঁর পরিবার। তবে বর্তমানে আর্থিক সংকটের মুখে মা–বাবার বেঁচে থাকার জন্য একটি আয়ের উৎস খুঁজছেন অন্য মেয়েরা। তাঁরা বলছেন, আবিরন মারা যাওয়ার পর সরকার থেকে তিন লাখ টাকার মতো দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা খরচ হয়ে গেছে। এখন সংসার চালানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটে তাঁদের।

আনছার সরদারের পঞ্চম মেয়ে রেশমা খাতুন। তিনি বলেন, মেজ বোন আবিরনের টাকা দিয়েই লেখাপড়া করেছেন। অন্য বোনদেরও লেখাপড়া করানো হয়েছে। বর্তমানে বোন ও দুলাভাইদের অধিকাংশই দিনমজুর ও ভ্যানচালক। এ কারণে বাবা আনছার সরদারকে কেউ আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতে পারছেন না। এমন পরিস্থিতিতে বৃদ্ধ বাবাকে যদি কোনো আয়ের পথ করে দেওয়া যেত, তাহলে পরিবারটি বেঁচে যেত।

আবিরন বেগম সরকারিভাবে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে সৌদি আরবের রিয়াদে গিয়েছিলেন ২০১৭ সালে। দুই বছর তিন মাস পর ২০১৯ সালে আবিরন লাশ হয়ে দেশে ফেরেন। লাশের সঙ্গে থাকা আবিরনের মৃত্যুসনদে মৃত্যুর কারণের জায়গায় লেখা ছিল হত্যা।

গত রোববার আবিরন বেগম হত্যা মামলায় সৌদি আরবে গৃহকর্ত্রীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। তাঁর নাম আয়েশা আল জিজানি। একই সঙ্গে ওই বাসার কর্তা বাসেম সালেমকে ৩ বছর ২ মাস কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার সৌদি রিয়াল জরিমানা করা হয়েছে। ওই দম্পতির ছেলে ওয়ালিদ বাসেম সালেমকে কিশোর উন্নয়নকেন্দ্রে সাত মাস রাখার রায় দিয়েছেন আদালত।