আয় বেড়েছে, সেবা নয়

নিচতলার বিশ্রামকক্ষটিকে এখন দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ভিআইপিদের বিশ্রামকক্ষে বসেন বন্দর পরিচালকের কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।

যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর আন্তর্জাতিক যাত্রী টার্মিনালে যাত্রীদের ভিড়। ৬ জুন তোলা
ছবি: প্রথম আলো

যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে যাতায়াতকারী যাত্রীদের সেবার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে আন্তর্জাতিক যাত্রী টার্মিনাল। যাত্রীদের কাছে থেকে টার্মিনালটি ব্যবহারের জন্য নেওয়া হচ্ছে ‘যাত্রীসুবিধা ফি’। গত চার অর্থবছরে এই টার্মিনাল থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষের আয়ও বেড়েছে। কিন্তু সে তুলনায় সেবার মান বাড়েনি বলে যাত্রীদের অভিযোগ।

টার্মিনাল ভবনের সামনে একই সময়ে পাঁচটি বড় বাস দাঁড়ানোর মতো খালি জায়গা আছে। কিন্তু বর্তমানে এই জায়গায় প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেল রাখা হচ্ছে। নিচতলায় খোলা বারান্দা, কাচ দিয়ে ঘেরা যাত্রীদের বিশ্রামকক্ষ ও শৌচাগার রয়েছে। তবে যাত্রীরা বিশ্রামকক্ষে বিশ্রাম নিতে পারেন না। বিশ্রামকক্ষটিকে দুটি ভাগ করা হয়েছে। এর একাংশ দিয়ে ভারত থেকে যাত্রীরা আসেন। অপর অংশ দিয়ে যাত্রীরা কাস্টমসের কার্যক্রম সেরে বহির্গমন বিভাগে যান।

ভবনের দ্বিতীয় তলায় যাত্রীদের জন্য রয়েছে রেস্তোরাঁ, শৌচাগারসহ বিশ্রামকক্ষ, হাত-মুখ ধোয়ার কক্ষ (ওয়াশরুম)। কিন্তু বর্তমানে দ্বিতীয় তলা সম্পূর্ণরূপে তালাবদ্ধ। যাত্রীরা ভেতরে ঢুকতে পারেন না। ভেতরে বন্দর কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন মালামাল রাখা। তৃতীয় তলায় টার্মিনাল তদারকি কার্যালয়, বিশেষ অতিথিদের (ভিআইপি) জন্য পাঁচটি বিশ্রামকক্ষ, শৌচাগার ও খোলা প্রাঙ্গণ। তবে ভিআইপিদের বিশ্রামকক্ষে এখন বন্দর পরিচালকের কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বসেন।

বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাতায়াতকারী যাত্রীদের সেবার মান বাড়াতে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে বেনাপোল স্থলবন্দরের তল্লাশিচৌকির পাশে নির্মাণ করা হয়েছে আন্তর্জাতিক যাত্রী টার্মিনাল। ছয়তলা ভিত্তির ওপর তৃতীয় তলা পর্যন্ত নির্মাণে খরচ হয়েছে ৭ কোটি ৬৮ লাখ ১৭ হাজার ৮৮২ টাকা। ২০১৭ সালের ২ জুন টার্মিনালটি উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পর ৪টি খাতে যাত্রীসুবিধা ফি নির্ধারণ করা হয় ৩৮ টাকা ৭৬ পয়সা। গত ৫ বছরে ৫ টাকা হারে ফি বৃদ্ধির কারণে ২০২২ সালে ফি দাঁড়িয়েছে ৪৩ টাকা ২ পয়সা। এর সঙ্গে ৬ টাকা ৪৫ পয়সা ভ্যাট মিলিয়ে মোট ফির পরিমাণ ৪৯ টাকা ৪৭ পয়সা।

বেনাপোল ইমিগ্রেশন অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাজু বলেন, বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে চার হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন। এর মধ্যে যাওয়ার পথে শুধু টার্মিনাল ফি নেওয়া হয়। করোনার আগে যাত্রী যাতায়াতের সংখ্যা ছিল সাত থেকে আট হাজার। বন্দর সূত্রে জানা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক যাত্রী টার্মিনাল থেকে আয় হয়েছে ৪৯ কোটি ৩৮ লাখ ৬৭ হাজার ৬৬ টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আয় হয়েছে ৮২ কোটি ৯২ লাখ ৯৭ হাজার ৬৫৮ টাকা, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮৪ কোটি ১ লাখ ৯০ হাজার ৯৯৩ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ৮৩ কোটি ৫৪ লাখ ৯৫ হাজার ৪৪৩ টাকা।

আন্তর্জাতিক যাত্রী টার্মিনাল থেকে আয় বাড়লেও যাত্রীদের সেবা দেওয়ার মান বাড়েনি। এ নিয়ে যাতায়াতকারী যাত্রীদের নানা অভিযোগ আছে। ৬ জুন কথা হয় ভারতগামী যাত্রী যশোরের অভয়নগর উপজেলার রঞ্জিতা বালার সঙ্গে। তিনি বলেন, শৌচাগার খুবই নোংরা আর দুর্গন্ধময়। দেখে মনে হয় নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না।

এ বিষয়ে বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ট্রাফিক) মো. মুনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, শৌচাগার সার্বক্ষণিক পরিষ্কার রাখা হয়। বিশ্রামকক্ষে বসানো হয়েছে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র। মনিরুজ্জামান আরও বলেন, যাত্রীদের সর্বাত্মক সেবা দিতে তাঁরা চেষ্টা করছেন।

মুনিরুজ্জামান আরও বলেন, বন্দর পরিচালনার জন্য একটি কার্যালয় দরকার। কিছুটা দূরে বন্দরের প্রশাসনিক কার্যালয় ছিল। কিন্তু ভবনটি বেশ পুরোনো, জরাজীর্ণ ও ব্যবহারের অনুপযোগী। এ কারণে বর্তমানে টার্মিনাল ভবনে কার্যালয় করা হয়েছে। এতে কাছে থেকে বন্দর পরিচালনা করতে অনেক সুবিধা হচ্ছে।