ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েই নিজের অর্থে সেতু নির্মাণ
ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন, এখনো দায়িত্ব নেননি। কিন্তু তারপরও সাত গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ লাঘব করতে নিজ উদ্যোগে সেতু নির্মাণ করে দিয়েছেন। এতে ওই গ্রামগুলোর ১০ হাজারের অধিক মানুষের যাতায়াতের কষ্ট দূর হয়েছে।
টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার নারান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান পদে গত ২৮ নভেম্বর নির্বাচিত হন মাসুদ তালুকদার। তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। নির্বাচনী প্রচারণাকালে নারান্দিয়া ইউনিয়ন ও এলেঙ্গা পৌরসভার সীমান্তবর্তী গ্রাম ঘড়িয়ায় একটি সেতুর অভাবে মানুষের চলাচলে দুর্ভোগ দেখতে পান। তখন কথা দিয়েছিলেন, নির্বাচিত হলে সঙ্গে সঙ্গে নিজ উদ্যোগে সেতু নির্মাণ করে দেবেন।
২৮ নভেম্বর নির্বাচিত হওয়ার দুদিন পরই মাসুদ তালুকদার নিজ উদ্যোগে ওই গ্রামে লৌহজং নদের ওপর কাঠের সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করেন। এটি নির্মাণ শেষ হয়েছে। এখন মানুষ সেতু দিয়ে পারাপার হতে পারছে।
স্থানীয় কয়েক বাসিন্দা জানান, নদীর পারের শেরপুর, মিরপুর, ঘড়িয়া, পোষণা, দেউলাবাড়ী, নাগা, তাঁতিহারাসহ কয়েকটি গ্রামের মানুষ বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার হয়েছেন এত দিন। রিকশা বা ভ্যান পারাপার করা যেত না। এখন খুব সহজেই সবকিছু পারাপার করা যাচ্ছে। এ ছাড়া এলাকায় তৈরি হয় বাঁশজাত বিভিন্ন পণ্য। এ পথে মালামাল কেনাবেচা ও পরিবহন করা যেত না। এখন সেতু নির্মাণের ফলে সহজেই এসব পণ্য পরিবহন করা হচ্ছে।
নতুন চেয়ারম্যান মাসুদ তালুকদার ১ ডিসেম্বর বিকেলে নব নির্মিত ১৩০ ফুট লম্বা কাঠের সেতুর উদ্বোধন করেন। লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণের সিংহভাগ টাকাই দিয়েছেন চেয়ারম্যান। বাকিটুকু বহন করেছে গ্রামবাসী।
নাগা গ্রামের বাসিন্দা হুরমুজ আলী তালুকদার বলেন, এই সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ করলেন নতুন চেয়ারম্যান। এ জন্য গ্রামবাসী তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ।
ঘড়িয়া গ্রামের ইমান আলী বলেন, ‘আমরা ভ্যান, রিকশা ও অটো নিয়ে গ্রামে চলাচল করতে পারতাম না। বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হতে কী যে অসুবিধা হতো, তা বলে বোঝাতে পারব না। সুন্দর ও মজবুত কাঠের সেতু পেয়ে আমরা খুবই খুশি।’
স্থানীয় দোকানদার আজম আলী বলেন, ‘চেয়ারম্যান হওয়ার দুদিনের মধ্যেই নিজের টাকায় এমন কাজ অন্য কেউ করেছেন কি না, সেটা আমার জানা নেই।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ তালুকদার বলেন, ‘জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। আমি জনগণের সেবা করতে এসেছি। সরকারি বরাদ্দ পেয়ে সেতুটি নির্মাণ করতে অনেক সময় লাগবে। গ্রামবাসীদের কষ্টের কথা ভেবে সেতু নির্মাণে গ্রামবাসীর সঙ্গেও আমি অংশগ্রহণ করেছি। তাঁদের দুঃখ–কষ্ট দূর করতে আমার প্রচেষ্টা সর্বদা চলমান থাকবে।’