ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আ.লীগের দুপক্ষে সংঘর্ষ, নিহত ১

সালথায় সংঘর্ষে নিহত মারিজ শিকদারের স্বজনদের আহাজারি। শুক্রবার রাতে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে
ছবি: প্রথম আলো

ফরিদপুরের সালথায় ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শনিবার আওয়ামী লীগের দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন।

নিহত ব্যক্তির নাম মারিজ সিকদার (৩৫)। তিনি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. রফিক মোল্লার সমর্থক।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সালথার যদুনন্দী ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রব মোল্লা মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। পাশাপাশি স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কর্মী মো. রফিক মোল্লা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নুরুজ্জামান ওরফে টুকু ঠাকুর।

এদিকে মারিজ নিহত হওয়ার খবরে প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটে। এ হামলায় অন্তত অর্ধশত বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়। এর মধ্যে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীরের বাড়িও আছে। আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

শনিবার বেলা দুইটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যদুনন্দী ইউনিয়নের খারদিয়া এলাকায় দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে সালথা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগানের ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, খারদিয়া এলাকায় কয়েক বছর ধরে দলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন রফিক মোল্লা ও নুরুজ্জামান। তাঁদের বাড়িও একই গ্রামে। এক মাস আগে নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়ে বিরোধের জের ধরে রফিকের কাছ থেকে আলাদা হয়ে যান নুরজ্জামান। নৌকার প্রার্থী আবদুর রব মোল্লা ও তাঁর সমর্থক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর মিয়ার দলে যোগ দেন নুরুজ্জামান।

এর জের ধরে শনিবার সকাল থেকে খারদিয়া এলাকায় উভয় প্রার্থীর শত শত সমর্থক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জড়ো হতে থাকেন। একপর্যায়ে বেলা দুইটার দিকে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষ চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। সংঘর্ষ চলাকালে কয়েকটি বসতঘরে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। এতে মারিজ সিকদার, নাসির মোল্লা, রহিম মণ্ডল, রশিদ শেখ, সাকির মোল্লা, টেপু শেখসহ উভয় প্রার্থীর অন্তত ২০ জন আহত হন। তাঁদের উদ্ধার করে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিকেল চারটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারিজ সিকদার মারা যান। তিনি খারদিয়া গ্রামের তোরাব সিকদারের ছেলে।

এদিকে মারিজের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে নৌকার মনোনীত প্রার্থীর সমর্থকদের বসতবাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। এ সময় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর মিয়ার বাড়িও ভাঙচুর করা হয়।

রফিক মোল্লা অভিযোগ করেন, ‘আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কোনো জনপ্রিয়তা নেই। তিনি আমার দলের লোক বাগিয়ে নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করাচ্ছেন।’ তিনি বলেন, হামলায় তাঁর সমর্থক নিহত হয়েছেন।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুর রব মোল্লা বলেন, ‘রফিক আগাগোড়াই একজন ভ্যাজাইলা মানুষ। তাঁর কারণেই এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।’

সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশিকুজ্জামান বলেন, দুই পক্ষের হামলায় একজন নিহত হয়েছেন। তিনি বলেন, পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও শটগানের গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে কী পরিমাণ গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়া হয়েছে, তার হিসাব করা হয়নি। তিনি বলেন, এলাকায় উত্তেজনা চলছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।