ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে হতদরিদ্রের জন্য বরাদ্দ করা ঘর নেওয়ার অভিযোগ

বরিশাল জেলার মানচিত্র

বরিশালের উজিরপুর উপজেলার শোলক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সংরক্ষিত মহিলা সদস্য, উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও ইউনিয়ন সভাপতি সীমা বেগমের (৩৭) বিরুদ্ধে সরকারি ত্রাণের টিন ও প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নিজের জন্য নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া ত্রাণের টিন বরাদ্দ পাওয়া নারী আত্মসাতের প্রতিবাদ করায় তাঁকে মারধর করেছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার ভুক্তভোগীরা উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।

ইউএনও ফারিহা তানজিন বলেন, এ বিষয়ে তিনি একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দা, ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শোলক ইউপির ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত সদস্য সীমা বেগম নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই হতদরিদ্রদের ভাতা, টিন ও ঘর বরাদ্দে উৎকোচ গ্রহণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া হতদরিদ্রের নামে বরাদ্দ দেওয়া কার্ড নিজের কাছে রেখে বরাদ্দের চাল উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন তিনি। ভুক্তভোগীরা বিষয়টি জানার পরে প্রতিবাদ করলে তাঁদের মারধরসহ নানা হয়রানির মাধ্যমে তাঁদের মুখ বন্ধ রাখেন।

২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. মন্নান মোল্লার স্ত্রী শিপোন বেগম (৪৫) অভিযোগ করে বলেন, ‘একটু বৃষ্টি অইলে মোর ঘর দিয়া পানি পড়ে। পোলাপান লইয়া ঘরে থাকতে পারি না। সীমা মেম্বার মোরে এক বান্ডিল টিন দেওয়ার কথা বইলা তিন হাজার টাকা দাবি করেন। মুই সরকারি এক বান্ডিল টিন পাওয়ার আশায় সমিতি দিয়া ঋণ লইয়া তাঁরে তিন হাজার টাকা দিই। কয়েক দিন আগে মোর নামে টিন দেয় সরকার। উজিরপুর হইতে মুই মোর নামের টিন বাড়িতে লইয়া যাই। মোর বাড়ি যাইয়া মেম্বারে হেই টিন লইয়া যায়। ওই টিন হের নিজের ঘরে লাগান। খালি হেইয়াই না, মোর নামে দেড় বছর আগে ভিজিডি কার্ড করে সীমা মেম্বার নিজেই চাল উঠাইয়া খান। মুই কইলে মোরে মামলা দেওয়ার ভয় দেখান। গত মঙ্গলবার মুই মেম্বরের ধারে মোর টাকা ফেরত চাইলে, মেম্বার ও তাঁর ছেলে সোহান (২২) মোরে বেদম মারধর করেন।’

একই এলাকার মো. সালাউদ্দিন মোল্লার স্ত্রী প্রতিবন্ধী আম্বিয়া বেগম (৩৫) বলেন, ইউপি সদস্য সীমা বেগম সরকারি ঘর দেওয়ার জন্য তাঁর কাছে এক লাখ টাকা চান। তিনি সেই টাকা না দিতে পারায় তিনি (ইউপি সদস্য) নিজের নামে সরকারি আধা পাকা ঘর করে নেন। তাঁর বাড়ির পেছনে সরকারি ওই ঘর করেছেন।

গত বুধবার সরেজমিনে দেখা গেছে, ইউপি সদস্য সীমা বেগমের ঘরের চালায় সরকারি ত্রাণের টিন ব্যবহৃত হচ্ছে। তাঁর বাড়ির পেছনে বানানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর। এ সময় কয়েকজন গ্রামবাসী জানান, গত মঙ্গলবার ভুক্তভোগী শিপোন বেগম ইউপি সদস্যের কাছে ত্রাণের টিন ফেরত চাইলে তিনি তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। একপর্যায়ে তিনি ও তাঁর ছেলে সোহান ওই নারীকে মারধর করেন। পরে তাঁকে হয়রানি করতে তিনি (ইউপি সদস্য) নিজেই হাসপাতালে ভর্তি হন।

এ বিষয়ে উজিরপুর মডেল থানার ওসি মো. আলী আর্শেদ বলেন, কাউকে মারধরের বিষয়ে তিনি কোনো অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।

ত্রাণের টিন ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নেওয়ার কথা স্বীকার করে সীমা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিপোন বেগমকে আগেই বলছিলাম, আমি মেম্বার, আমার নামে তো টিন নিতে পারব না। তোমার নামে টিন এনে আমি নেব। এ শর্তে রাজি হওয়ায় তাঁর নামে টিন বরাদ্দ নিয়ে আমিই নিয়েছি। এ ছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দলীয় কোটায় আমার নামে একটি ঘর বরাদ্দ দিয়েছেন। তাই আমি সরকারি ঘরটি আমার খাবারের ঘর হিসেবে ব্যবহার করছি।’ শিপোন বেগমের নামে ভিজিডি কার্ড বরাদ্দ দিয়ে নিজেই চাল তুলে নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভিজিডি কার্ডটি আমার কাছেই আছে। কার্ড করার সময় তিনি ও আমি দুজনে ভাগাভাগি করে খাব, সেই চুক্তিতেই তাঁর নামে কার্ড বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’

এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম জামাল হোসেন বলেন, ঘর বরাদ্দের বিষয়ে তিনি সুপারিশ করেছেন। উপজেলা থেকে তাঁর নামে একটি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ত্রাণের টিনের ব্যাপারে তিনি বলেন, তাঁর (ইউপি সদস্য) দাবি সঠিক।

উজিরপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা অয়ন সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি টিন ইউপি সদস্যের ঘরে কীভাবে এসেছে, তা আমার জানা নেই। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ সিকদার ওরফে বাচ্চু প্রথম আলোকে বলেন, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন। অপরাধীর পরিচয় অপরাধী। যদি কোনো ইউপি সদস্য এ ধরনের অনৈতিক কাজ করে থাকেন, তাঁর বিরুদ্ধে প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।