ইটভাটার মধে৵ উঠছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর

ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩২টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে গোবিন্দগঞ্জের ঘোড়ামারা গ্রামে।

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কামারদহ ইউনিয়নের ঘোড়ামারা গ্রামে ইটভাটার ভেতরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ চলছে। গত শনিবার
ছবি: প্রথম আলো

দক্ষিণে ভাটার চুল্লিতে ইট পোড়ানো হচ্ছে। উত্তরে শুকানো হচ্ছে কাঁচা ইট। পূর্ব দিকে বোরো ফসলের মাঠ। পশ্চিমে ভাটার কার্যালয়। মাঝখানে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩২টি ঘরের নির্মাণকাজ চলছে। ইতিমধ্যে এসব ঘরের নির্মাণকাজ ৩০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। এটি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কামারদহ ইউনিয়নের ঘোড়ামারা গ্রামের চিত্র।

বিটিবি নামের ইটভাটাটি লোকালয়ের আধা কিলোমিটারের মধ্যে গড়ে উঠেছে। এর পাশ ঘেঁষেই আছে ফসলি জমি। ইটভাটা চালানোর জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ছাড়পত্র দেখাতে পারেননি ভাটার মালিক। তার ওপর তিনি খাসজমি দখলে নিয়ে ভাটার কাজ চালাচ্ছেন।

ইটভাটার চুল্লি ও চিমনি থেকে নির্মাণাধীন ঘরগুলো ৩০ থেকে ৩৫ ফুট দূরে অবস্থিত। এখানে ঘর নির্মাণ করা হলেও কেউ বসবাস করতে পারবে না। এটা বসবাসের অনুপযোগী একটি জায়গা। স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি এখানে বিবেচনাতেই নেওয়া হয়নি বলে মন্তব্য করেন গোবিন্দগঞ্জ নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক মতিন মোল্লা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কামারদহ ইউনিয়নে আরও অনেক খাসজমি আছে। সেখানেও ঘর নির্মাণ করা যেত। তারপরও কী উদ্দেশ্যে ইটভাটার মধে৵ ঘর তৈরি করা হচ্ছে, তা বোধগম্য নয়।

উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে বর্তমান সরকার সারা দেশে আশ্রয়ণ–২ প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় উপজেলায় ২৫০টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে কামারদহ ইউনিয়নে ৩৭টি, কাটাবাড়িতে ১৭৫টি, দরবস্তে ২৩টি, হরিরামপুর ও নাকাই ইউনিয়নে ১৫টি ঘর নির্মাণের কথা। প্রতিটি ঘর নির্মাণে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কামারদহ ইউনিয়নে ৩৭টির মধ্যে ঘোড়ামারা গ্রামে ৩ সারিতে ৩২টি ঘর নির্মিত হচ্ছে। ইটভাটার মধে৵ ১০৪ শতাংশ খাসজমিতে প্রায় দেড় মাস আগে ঘর নির্মাণ শুরু করে উপজেলা প্রশাসন।

গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভা ঘেঁষে কামারদহ ইউনিয়ন। উপজেলা শহর থেকে ছয় কিলোমিটার এবং ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে ঘোড়ামারা গ্রাম। গ্রামে প্রায় ৯ বছর আগে ১৫ বিঘা ভাড়া নেওয়া জমিতে বিটিবি নামের ভাটাটি স্থাপিত হয়। তখন থেকে ভাটায় ইট পোড়াচ্ছিলেন বগুড়ার এক ব্যবসায়ী। গত বছর তাঁর কাছ থেকে ভাটার স্থাপনা কিনে নেন গোবিন্দগঞ্জের ব্যবসায়ী আবু রায়হান। তিনিই এখন ভাটার মালিক। তিনি ওই খাসজমি ইট তৈরির কাজে ব্যবহার করতেন। আবু রায়হান বলেন, ঘরগুলো হচ্ছে ভাটার মাঝখানে। প্রশাসনের নির্দেশে তিনি জায়গা খালি করে দিয়েছেন। আবু রায়হান বলেন, তিনি ভাটার স্থাপনা কিনেছেন। আগের মালিক কীভাবে চালিয়েছেন জানেন না। কোনো কাগজপত্রও দেখাতে পারেননি। অবৈধ ভাটা কীভাবে চালাচ্ছেন জানতে চাইলে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।

আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের ভূমি ব্যবহারের নীতিমালা ৬(ক) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, পরিবেশের প্রতি হুমকি সৃষ্টি করে, এমন কোনো প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো যাবে না। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ২০১০ সালের ১৭ আগস্ট ওই নীতিমালা অনুমোদিত হয়েছে। নীতিমালা থাকার পরও পরিবেশের ক্ষতি করবে এমন জায়গায় ঘর নির্মাণ চলছে।

ইটভাটার ভেতরে ভূমিহীনদের ঘর নির্মাণ কতটুকু পরিবেশবান্ধব, তা নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশ না করার শতে৴ ঘোড়ামারা গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, ভাটার কারণে এসব ঘরের = মানুষ ঝুঁকিতে আছেন।

স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়ে গাইবান্ধার সিভিল সার্জন আ ক ম আখতারুজ্জামান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘসময় থাকলে ইটভাটার কালো ধোঁয়া ফুসফুসে ও চামড়ায় ক্যানসার, নিউমোনিয়া ও অ্যাজমা হতে পারে। পোড়ামাটির গন্ধে পেটের সমস্যা ও কিডনির সমস্যা হতে পারে।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ইটভাটাটি অবৈধ। তাঁরা খাসজমি দখল করে কাজ চালাচ্ছিলেন। তিনি ভাটার মালিকের কাছ থেকে জায়গাটি উদ্ধার করেছেন। ইটভাটার হিসাব করে তো ঘর নির্মাণ বন্ধ করা যাবে না; বরং তাঁরা ভাটাটি সরানোর ব্যবস্থা করবেন।