ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অন্তঃসত্ত্বা নারীর পেটে লাথি মারার অভিযোগ, তদন্ত কমিটি গঠন

বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ
ফাইল ছবি

বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অন্তঃসত্ত্বা এক রোগীর পেটে লাথি মেরে আহত করার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শনিবার রাত নয়টার দিকে হাসপাতালের গাইনি ও প্রসূতি বিভাগে এ ঘটনা ঘটে।

এর আগে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তোলায় অন্তঃসত্ত্বা ওই নারীর স্বামীর ওপর হামলা চালান ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গেলে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা পুলিশের ওপরও চড়াও হন। এ ঘটনায় আজ রোববার সকালে হাসপাতাল প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। হাসপাতালের উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মারধরের একপর্যায়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা আমার স্ত্রীর তলপেটে লাথি মারলে তাঁর রক্তক্ষরণ বেড়ে যায়। এ সময় পুলিশ এলে তাঁরাও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হামলার শিকার হন।
আসলাম আলী, অন্তঃসত্ত্বার স্বামী

হামলার শিকার ওই অন্তঃসত্ত্বা নারীর নাম জয়নব বেগম। তিনি স্বামী আসলাম আলীর সঙ্গে বগুড়া শহরের কামারগাড়ি এলাকায় থাকেন।

আসলাম আলী জানান, তাঁর স্ত্রী ছয় সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা। পেটে ব্যথাজনিত সমস্যায় গত বুধবার অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। স্ত্রীর রক্তক্ষরণ হওয়ায় অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছিল। চিকিৎসকদের বিষয়টি জানালেও তাঁরা আমলে নিচ্ছিলেন না। গতকাল দুপুরে স্ত্রীর অবস্থার অবনতি হলে আবারও তিনি চিকিৎসকদের কাছে যান। কিন্তু চিকিৎসকেরা সমস্যা খতিয়ে না দেখে উল্টো বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু করেন। চিকিৎসায় অবহেলার বিষয়টি মুঠোফোনে ভিডিও করায় চিকিৎসকদের হুমকিতে হাসপাতাল ছেড়ে চলে আসতে হয়। পরে স্ত্রীকে সেখান থেকে বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করাতে চাইলেও চিকিৎসকেরা ছাড়পত্র দিতে অস্বীকৃতি জানান।

পরে মুঠোফোনে থাকা ওই ভিডিও মুছে ফেলতে চিকিৎসকেরা কৌশলে রাতে তাঁকে হাসপাতালে ডাকেন। সেখানে যাওয়ার পর চিকিৎসকদের কক্ষে আটকে রেখে তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয়। এ সময় তাঁর ছোট ভাই তাঁকে বাঁচাতে এলে তাঁকেও পেটানো হয়।

আসলাম আলী অভিযোগ করে বলেন, ‘আটকে রাখার খবর পেয়ে আমার স্ত্রী সেখানে ছুটে এলে তাঁকেও মারধর করা হয়। মারধরের একপর্যায়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা আমার স্ত্রীর তলপেটে লাথি মারলে তাঁর রক্তক্ষরণ বেড়ে যায়। এ সময় পুলিশ এলে তাঁরাও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হামলার শিকার হন। পরে সেখান থেকে কোনোরকমে বের হয়ে রাতেই শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে স্ত্রীকে ভর্তি করিয়েছি।’

তবে হাসপাতালের উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রোগীর অবস্থা উন্নতি হলেও ওই রোগীর স্বামী চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে রোগীদের উসকে দিয়ে কয়েকজনের বক্তব্যের ভিডিও ধারণ করে তা অনলাইনে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেন। রাত নয়টার দিকে আবার কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে এসে চিকিৎসকদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান ওই রোগীর স্বামী। একপর্যায়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা ও ধস্তাধস্তি হয়। সেখানে সাদাপোশাকে পুলিশ এসে রোগীর পক্ষ নিলে তাঁদের সঙ্গেও কথা–কাটাকাটি হয়। পরে ওই রোগীর ছাড়পত্র নিয়ে তাঁর স্বজনেরা বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করান। ঘটনা এ পর্যন্তই। রোগীর পেটে লাথি মেরে আহত করার অভিযোগ ভিত্তিহীন। তবু ঘটনা খতিয়ে দেখতে আজ হাসপাতাল প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কেউই রোগীকে মারধর করেনি। আমরা তো চিকিৎসক। আমরা তো রোগীকে মারতে পারি না। তবে রোগীর স্বামী ও তাঁর দলবলের সঙ্গে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হাতাহাতি হয়েছে।
নুরে আলম সিদ্দিকী, সভাপতি, শজিমেক ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ

এ প্রসঙ্গে শজিমেক ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি নুরে আলম সিদ্দিকী জানান, ওই রোগীর স্বজন চিকিৎসকদের ওপর অকারণে ক্ষুব্ধ হয়ে এক চিকিৎসকের মুখের ওপর ফাইল ছুড়ে মারেন। এ সময় সেখানে থাকা সায়েম নামের একজন ইন্টার্ন চিকিৎসকের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। পরে ওই রোগীর স্বামী দলবল নিয়ে সন্ধ্যায় চিকিৎসকদের কক্ষে আসেন। এ সময় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে আবারও বাগ্‌বিতণ্ডা হয়।

নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘সন্ধ্যায় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে হাতাহাতি শুরু হয়। কিন্তু ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কেউই রোগীকে মারধর করেনি। আমরা তো চিকিৎসক। আমরা তো রোগীকে মারতে পারি না। তবে রোগীর স্বামী ও তাঁর দলবলের সঙ্গে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হাতাহাতি হয়েছে। এ সময় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের একটি লাথি পুলিশের গায়ে লেগেছে। ’

এদিকে পুলিশের ওপর হামলার ব্যাপারে জানতে চাইলে বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়সাল মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালে রোগীর স্বজনের ওপর ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়েছিল। এ সময় ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা পুলিশের সঙ্গেও বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান। তবে বিষয়টি রাতেই মিটমাট হয়ে গেছে।