ইফতারির বাজারে চিরচেনা ভিড়, বিক্রিও ভালো

  • করোনা পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পর ২০২০ সালে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে সিলেট নগরের সব রেস্তোরাঁ বন্ধ ছিল।

  • সেবার রমজান মাসে কোথাও ইফতারসামগ্রী বিক্রি হয়নি।

রোজার প্রথম দিনেই সিলেটে জমে উঠেছে ইফতারির বাজার। গতকাল বিকেলে নগরের আম্বরখানা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

করোনা পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পর ২০২০ সালে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে সিলেট নগরের সব রেস্তোরাঁ বন্ধ ছিল। ফলে সেবার রমজান মাসে কোথাও ইফতারসামগ্রী বিক্রি হয়নি। এর পরের বছর রেস্তোরাঁ সীমিত পরিসরে চালু হলেও ইফতারির বাজার জমেনি। এবার পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় বদলে গেছে বিগত দুই বছরের দৃশ্য। আবার ফিরে এসেছে চিরচেনা পরিবেশ। এখন পুনরায় কেনাকাটায় মুখর সিলেট নগরের ইফতারির বাজার।

গতকাল রোববার বিকেলে সরেজমিন দেখা গেছে, রোজার প্রথম দিনেই হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোর সামনে শামিয়ানা টানিয়ে নানা পদের ইফতারির পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। চারদিকে ক্রেতা-বিক্রেতাদের হইহুল্লোড় আর হাঁকডাক। বিগত দুই বছর আগের রোজার চিরচেনা রূপ যেন ফিরে এসেছে। তবে ক্রেতাদের অনেকে ইফতারসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছেন। যদিও এ অভিযোগের জবাবে বিক্রেতারা বলছেন, সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় ইফতারসামগ্রীতেও এর প্রভাব পড়েছে।

চারদিকে ক্রেতা-বিক্রেতাদের হইহুল্লোড় আর হাঁকডাক। বিগত দুই বছর আগের রমজান মাসের চিরচেনা রূপ যেন ফিরে এসেছে।

তেররতন এলাকার বাসিন্দা সাবেক সরকারি কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমানের সঙ্গে গতকাল বিকেল পৌনে চারটায় কথা হয় নগরের বন্দরবাজার এলাকায়। তিনি বলেন, ‘করোনার জন্য গেল দুই রমজান মাসে বাইরে থেকে ইফতারসামগ্রী কেনা হয়নি। অথচ এর আগে প্রতিবারই ঘরে তৈরি ইফতারসামগ্রীর পাশাপাশি বাজার থেকে জিলাপি, বাখরখানিসহ নানা পদ কেনা হতো। এবারও পুনরায় আগের নিয়মে ফিরেছি।’

নগরের বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, আম্বরখানা, শাহি ঈদগাহ, চৌহাট্টা, লামাবাজার, কদমতলী, মীরাবাজার, শিবগঞ্জ, টিলাগড়, উপশহরসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হোটেল-রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে ফুটপাতে নানা পদের ইফতারসামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। সবখানেই ক্রেতাদের ভিড় ছিল। এর বাইরে খেজুর, মুড়ি, ফল, শাকসহ ইফতারসামগ্রীর দোকানে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে।

জিন্দাবাজার এলাকার পানসী রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আহমদ বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে গেল দুই বছর ইফতারসামগ্রী বেচাকেনা করা যায়নি। এবার রোজার প্রথম দিন ক্রেতাদের উপস্থিতি আশাবাদী করেছে। প্রথম দিনের চিত্র দেখেই বোঝা যাচ্ছে, এবার বেচাকেনা ভালো হবে।’

দোকানিরা জানিয়েছেন, ইফতারসামগ্রীর মধ্যে চিকেন ও বিফ আখনি এবং পাতলা খিচুড়ি রোজদারদের চাহিদার শীর্ষ আছে। এর বাইরে অন্যান্য সামগ্রীর মধ্যে জিলাপি, বাখরখানি, পেঁয়াজি, আলুর চপ, ডিমের চপ, ছানা, বেগুনি, আলুনি, শাকের পাকুড়া, সবজির পাকুড়া, চিকেন টিক্কা, চিকেন ফ্রাই, চিকেন রোস্ট, কাবাব, রেশমি কাবাব, রোল, বিফ চাপ, বিফ বটি বারবিকিউ, ফিশ গ্রিল, হালিম, বিরিয়ানি ও তেহারির কদর বেশি।

রিকাবীবাজার এলাকায় শাক কিনছিলেন খবিরুল আলম নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, তিনি বাইরে থেকে ছয় থেকে সাত পদের ইফতারসামগ্রী কিনেছেন। এর বাইরে কয়েক জাতের শাক কিনেছেন। তবে গত দুই দিনে শাক আর ফলের দাম তুলনামূলকভাবে বেড়ে গেছে। এটা খুবই দুঃখজনক।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) ইমরুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, রোজার প্রথম দিন থেকে জেলা প্রশাসন বাজার তদারকি শুরু করেছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, এডিএম ও স্থানীয় সরকারের উপপরিচালকের নেতৃত্বে ৫টি দল এ কাজ করছে। এর বাইরে নির্বাহী ম্যাজিট্রেটদের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। অযথা কেউ ইফতারসামগ্রীর দাম বাড়ালে এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার বিক্রি করলে তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।