ইফতারে ‘খাবার কম পড়ায়’ সাংসদের উপস্থিতিতে আ.লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ

ঢাকা জেলার মানচিত্র

ঢাকার ধামরাই উপজেলায় ইফতার মাহফিলে খাবার বিতরণকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উপজেলার আমতা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি, ইউপি সদস্যসহ অন্তত আটজন আহত হয়েছেন।

গতকাল বুধবার বিকেলে উপজেলার আমতা হরলাল উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে আমতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ঢাকা–২০ (ধামরাই) আসনের সাংসদ বেনজীর আহমদ উপস্থিত ছিলেন। ইফতার মাহফিলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সময় সাংসদ বেনজীর ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।

ঘটনাস্থল থেকে তাৎক্ষণিকভাবে রুহুল আমিন (১৮) ও মো. কাইয়ুম (২০) নামের দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। পরে গতকাল রাতে আমতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনের মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে তাঁদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। রুহুল আমিন উপজেলার আমতা ইউনিয়নের নান্দেশ্বরী গ্রামের তরব আলীর ছেলে ও কাইয়ুম একই গ্রামের নাসির উদ্দিনের ছেলে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, গতকাল বিকেলে ইফতার মাহফিলের খাবার বিতরণের সময় খাবার কম পড়ায় আমতা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান মো. আবুল হোসেন ও বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আরিফ হোসেনের কর্মী–সমর্থকদের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের লোকজন চেয়ার তুলে একে অন্যকে মারধর শুরু করেন।

সাবেক সাংসদের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী পূর্বপরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি।
সাংসদ বেনজীর আহমদ

এ সময় ইউপি সদস্য বিউটি আক্তার, আমতা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সেলিমসহ অন্তত আটজন আহত হন। আহত ব্যক্তিদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ইফতার মাহফিলে উপস্থিত পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে পরে কাওয়ালীপাড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্র থেকে অতিরিক্তি পুলিশ ঘটনাস্তলে পাঠানো হয়।

সাংসদ বেনজীর আহমদের দাবি, পূর্বপরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে সাবেক সাংসদ এম এ মালেকের সমর্থক মো. সেলিমসহ কয়েকজন ইফতার মাহফিলকে বিতর্কিত করার চেষ্ট করেছেন। তাই তাঁরা তুচ্ছ ঘটনায় বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে বেশ কয়েকজনকে মারধর করেছেন।

বেনজীর আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাবেক সাংসদের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী পূর্বপরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। প্রথমে দু–একজনের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে আমি চলে আসার পর মারামারির ঘটনা ঘটে।’

খাবার বিতরণের দায়িত্বে থাকা কর্মীদের ভুল–বোঝাবুঝির জন্য সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছেন বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আরিফ হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সংঘর্ষের ঘটনাটি কোনো রাজনৈতিক পক্ষ–বিপক্ষের মধ্যে নয়। সাংসদ নিজেই এ সময় উপস্থিত ছিলেন। খাবার বিতরণের নিয়মে একটু ‘এদিক–সেদিক’ হওয়ায় জুনিয়র ছেলেদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে।
এদিকে সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মারামারির ওই স্থানে ছিলাম না। আমি শুনছি ঝামেলা হইছে। এখনো ভালো করে বিষয়টি জানি না।’

জানতে চাইলে কাওয়ালীপাড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ রাসেল মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ইফতার বিতরণের সময় খাবার কম পড়ায় বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থলে আগে থেকেই পুলিশ ছিল। তবে পরে অতিরিক্ত পুলিশের সহায়তা নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছিল। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আজ সকালে আদালতে পাঠানো হয়েছে।