উজিরপুর সড়ক দুর্ঘটনায় চালক-সহকারীর পরিচয় মিলেছে

বরিশালের উজিরপুরে গত রোববার ভোরে দুর্ঘটনায় দুমড়েমুচড়ে যাওয়া যমুনা পরিবহনের একটি বাস
ফাইল ছবি

বরিশালের উজিরপুরে যমুনা পরিবহনের একটি বাস দুর্ঘটনার কবলে পড়ার পর থেকে বাসটির চালক ও তাঁর সহকারীর পরিচয় পাওয়া যাচ্ছিল না। দুর্ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পর আজ সোমবার তাঁদের পরিচয় মিলেছে। এর মধ্যে চালকের সহকারী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। দুর্ঘটনায় সামান্য আহত হলেও বেঁচে আছেন চালক। তাঁকে গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। পুলিশ ও যমুনা পরিবহন মালিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

আরও পড়ুন

উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরসেদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, দুর্ঘটনা কবলিত বাসের চালকের নাম আরিফ খান। তিনি বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের মানিক খানের ছেলে। আরিফ খান পাঁচ বছর ধরে যমুনা পরিবহন বাস চালিয়ে আসছেন। গাড়িটির চালক যে আরিফ খান ছিলেন তা নিশ্চিত করেছেন যমুনা পরিবহনের মালিক ফারুক আহমেদও। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর দুর্ঘটনাকবলিত গাড়িটি আরিফ খানই চালাচ্ছিলেন।

গাড়িটির নম্বর ঢাকা মেট্রো-ব-১৫৯০৪৬। পুলিশ জানিয়েছে, গাড়িটিতে চালকের সহকারীর নাম ইমরান হোসেন (২৭)। তিনি বরগুনা সদরের চরগাছিয়া গ্রামের আবদুল কুদ্দুসের ছেলে। ইমরান দুর্ঘটনার সময় ঘটনাস্থলেই নিহত হন। তাঁর মরদেহ অজ্ঞাত হিসেবে বরিশালের শের-ই–বাংলা মেডিকেলে কলেজের মর্গে রাখা হয়েছিল। আজ স্বজনেরা এসে মরদেহ নিয়ে গেছেন।

পাশাপাশি অজ্ঞাত আরও দুজনের মরদেহের পরিচয় মিলেছে। মরদেহ স্বজনেরা নিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের মর্গের ওয়ার্ড মাস্টার আবুল কালাম। তিনি বলেন, ওই দুজনের নাম ওই বাসের যাত্রী পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নের ইয়াখালী গ্রামের মৃত করিম খানের ছেলে রিপন খান (৪৮) ও বরগুনা সদরের মীরের হাওলা গ্রামের মৃত তাজেম আলীর ছেলে রেজা চোকদার (২৩)।

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের উজিরপুর উপজেলার বামরাইল ইউনিয়নের বামরাইল এলাকায় গত রোববার ভোরে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মেহগনি গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায় যমুনা পরিবহনের বাসটি। এতে ঘটনাস্থলেই ১০ জনের প্রাণ যায়। আহত হন অন্তত ২০ জন। বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের অভিযোগ, চালক বেপরোয়া গতিতে বাসটি চালাচ্ছিলেন এবং তিনি ঘুমে ঢুলছিলেন। দুর্ঘটনার পর বাসটির চালক ও তাঁর সহকারীর পরিচয় পাওয়া যাচ্ছিল না। দুর্ঘটনাকবলিত বাসের আহত একাধিক যাত্রী ও স্থানীয়রা জানান, দুর্ঘটনার পর বাসের চালক লাফিয়ে পড়ে সামান্য আহত হন। পরে তিনি রোববার সকাল পৌনে ছয়টার দিকে ঢাকাগামী পরিবহনে উঠে চলে যান।

ওই সড়ক দুর্ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বরিশাল জেলা প্রশাসন। কমিটির প্রধান করা হয়েছে বরিশালের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রকিবুর রহমান খানকে। কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রোগীদের খোঁজখবর নেওয়াসহ সার্বিক তত্ত্বাবধানে সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নিহত ব্যক্তিদের প্রত্যেকের পরিবারকে সরকারি সহায়তা হিসেবে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার।

মর্মান্তিক ওই সড়ক দুর্ঘটনায় ওই বাসের চালককে আসামি করে উজিরপুর মডেল থানায় মামলা করেছেন পৌরনদী হাইওয়ে থাকার সার্জেন্ট মো. মাহবুব। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে উজিরপুর মডেল থানার ওসি আরসেদ আলী বলেন, আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তদন্ত কমিটিও কাজ শুরু করেছে।