উদ্বোধনের তিন দিন পরও চলছে স্টল তৈরি, দর্শনার্থী হাতে গোনা

উদ্বোধনের তিন দিন পার হলেও অন্তত ৫০টি স্টল তৈরি হয়নি
ছবি: প্রথম আলো

করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর বসেনি চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। মেলায় আসতে পারেননি ঢাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ হোসেন। তবে এবার কয়েক শ রকমের গৃহস্থালি পণ্য নিয়ে তিনি হাজির হয়েছেন মেলায়। আজ শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় মোহাম্মদ হোসেন ভেবেছিলেন, ক্রেতার ভিড় পাবেন। বিক্রি ভালো হবে। তবে বৃষ্টির কারণে সেটি হয়নি। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মেলায় তেমন সমাগম ছিল না। বিকেলে অবশ্য কিছু ক্রেতা-দর্শনার্থী এসেছিলেন। তবে বিক্রি ছিল কম।

পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মেলা মাত্র শুরু হলো। আর কয়েক দিন গেলেই জমে উঠবে। এবার নিয়ে ছয়বার তিনি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় অংশ নিচ্ছেন। প্রতিবারই ভালো বিক্রি হয়েছে।

মোহাম্মদ হোসেনের স্টলের নাম ‘ফ্রেন্ডস গ্যালারি’। আজ তাঁর সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল, ঘড়ির কাঁটা তখন পাঁচটার ঘরে। স্টলে মানুষ ছিল হাতে গোনা। জাইফা ইসলাম নামের এক ক্রেতা মগ দেখছিলেন ঘুরে ঘুরে। এক ফাঁকে জাইফা বলেন, মেলা শুরু হয়েছে তিন দিন হয়েছে। অথচ বড় বড় প্যাভিলিয়ন ও অনেক স্টল এখনো পুরোপুরি তৈরি হয়নি। এসব স্টল তৈরি হয়ে গেলে মেলায় সমাগম আরও বাড়তে পারে।

মেলা ঘুরে জাইফার কথার সত্যতা পাওয়া গেল। দেখা গেছে, উদ্বোধনের তিন দিন পার হলেও অন্তত ৫০টি স্টল তৈরি হয়নি। এর মধ্যে বড় প্যাভিলিয়নও রয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দূরদূরান্ত থেকে আসায় স্টল বানাতে দেরি হচ্ছে। আবদুল হালিম নামের জুতার দোকানের এক বিক্রয়কর্মী প্রথম আলোকে বলেন, স্টল তৈরির কাজ দ্রুত শেষ করে তাঁরা বিক্রিবাট্টা শুরু করবেন।

এর আগে গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৯তম আসর শুরু হয়। মাসব্যাপী এ মেলায় এবার অংশ নিচ্ছে ১৭টি প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন, ৩৩টি প্রিমিয়ার স্টল, ৯৯টি গোল্ড স্টল, ৪৮টি মেগা স্টল, ১৪টি ফুড স্টল, ২টি আলাদা জোনসহ মোট ৩৭০টি স্টল। এবার ৩১০টির বেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে মেলায়। এ ছাড়া মেলায় বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন স্থাপন করা হয়েছে। মেলায় নিজস্ব পণ্য নিয়ে অংশ নিচ্ছেন ভারত, থাইল্যান্ড ও ইরানের ব্যবসায়ীরা।

গতবারের মতো এবারও মেলার টিকিটের মূল্য ১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে নগরের বিভিন্ন স্কুলের শিশু থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা বিনা মূল্যে প্রবেশ করতে পারছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলছে এ মেলা। মেলা প্রাঙ্গণ বিনা মূল্যে ওয়াইফাই সুবিধাও রাখা হয়েছে। আরও রাখা হয়েছে ১২ হাজার ৩২০ বর্গফুটের একটি ওপেন প্লাজা, যেখানে বিশ্রাম নিতে পারবেন দর্শনার্থীরা। আর শিশুদের জন্য রয়েছে তিন হাজার বর্গফুটের একটি বিনোদনকেন্দ্র।

চলছে স্টল নির্মাণের কাজ
ছবি: প্রথম আলো

এদিকে বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পর আজ শেষ বিকেলে মেলায় ঢুঁ মেরেছেন ক্রেতা-দর্শনার্থীরা। প্রায় ২০ লাখ টাকার শো-পিস, মাটির তৈজসপত্র, ফুল নিয়ে ঢাকা থেকে মেলায় এসেছেন শাহ পরান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মেলায় এলে পণ্যের বিজ্ঞাপন হয়ে যায়। পরে অনেকে যোগাযোগ করে মাটির তৈরি নানা পণ্য কেনেন। এ কারণেই মূলত মেলায় অংশ নেওয়া তাঁর।

মেলায় মূল প্রবেশ ফটক পার হয়ে বাঁ দিকে এগোলেই নোভা ইলেকট্রনিকসের স্টল। ক্রেতা আকর্ষণে দৃষ্টিনন্দনভাবে সাজানো হয়েছে এই স্টলটি। রাখা হয়েছে কয়েক শ রকমের পণ্য। পণ্য বিক্রয়ে তারা দিচ্ছে নানা ছাড়ও। নগরের মাস্টারপোল থেকে স্ত্রীকে নিয়ে এসেছিলেন ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শফিক। তিনি বলেন, একটি মাঠে হাজার হাজার পণ্যের পসরা বসেছে। এ মেলায় পাওয়া যাচ্ছে পোশাক, জুতা, চামড়ার তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র, ফুল, গয়না, আসবাব, ইলেকট্রনিকস পণ্যসহ নানা কিছু। ফলে দরদাম করে পছন্দমতো কেনা যাচ্ছে।

সিরমিকের পণ্যের একটি স্টলে মগ পছন্দ করছেন এক গ্রাহক
ছবি: প্রথম আলো

জানতে চাইলে মেলা কমিটির চেয়ারম্যান এ কে এম আকতার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, স্টল তৈরি করতে কোনো সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। মেলা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে আজকালের মধ্যে সব স্টল তৈরি হয়ে যাবে। স্টল ও প্যাভিলিয়নের নকশা ব্যবসায়ীরা নিজেরাই করেন। অনেকেই নানা কারণে কাজ শেষ করতে পারেননি। আবার বেশির ভাগই চালু হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীদের মেলা কমিটির পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহায়তা করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরাও দিন–রাত কাজ করছেন।