‘উন্নয়নে’ কমেছে কৃষিজমি

গত ১০ বছরে ৬৫০ হেক্টর কৃষিজমির মাটি কেটে ইটভাটা অথবা বসতবাড়ি তৈরির কাজে ব্যবহারের জন্য বিক্রি করা হয়েছে।

খননযন্ত্র দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে কৃষিজমি থেকে। এতে বদলে যাচ্ছে আবাদি জমির শ্রেণি। গত শনিবার বিকেলে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানের লতব্দি ইউনিয়নের চণ্ডীবর্দী এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায় দিন ও রাতে ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে ইটভাটায়। গত ১০ বছরে অন্তত ৬৫০ হেক্টর কৃষিজমির মাটি কাটা হয়েছে। এতে দিন দিন কমে যাচ্ছে কৃষিজমি।

স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, লতব্দি, বাসাইল, বালুচর, কেয়াইন, শেখরনগর, রাজানগরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে কৃষিজমির মাটি দিন ও রাতে কাটা হচ্ছে। জমির মালিকদের কাছে থেকে অর্থের বিনিময়ে অথবা হুমকি দিয়ে মাটি কেটে নিয়ে ইটভাটায় বিক্রি করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।

এভাবে মাটি কাটার বিষয়টিকে আমিও সমর্থন করি না। তবে দেশের উন্নতির জন্য ইট দরকার, ইট বানাতে মাটি কাটা হচ্ছে।
বরকত উল্লাহ, ইটভাটার মালিক

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বেশির ভাগ জমিই তিন ফসলি। ১০ বছর আগে তিন ফসলি কৃষিজমি ছিল ১৪ হাজার ৪৮০ হেক্টর। বর্তমানে আছে ১৩ হাজার ৮৩০ হেক্টর। কমে যাওয়া ৬৫০ হেক্টর জমির মাটি কেটে ইটভাটা অথবা বসতবাড়ি তৈরিতে ব্যবহারের জন্য বিক্রি করা হয়েছে।

কৃষি কর্মকর্তা রোজিনা আক্তার বলেন, এভাবে কৃষিজমির মাটি কেটে পুকুর করায় আবাদি জমি কমতে শুরু করেছে। মাটি কাটা বন্ধ না হলে শিগগিরই উপজেলার সব কৃষিজমি বিলীন হয়ে যাবে।

গত শনিবার দুপুরে লতব্দি ইউনিয়নের খিদিরপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মূল সড়ক থেকে অন্তত দুই কিলোমিটার ভেতরের জমি থেকে খননযন্ত্র দিয়ে মাটি কেটে ট্রাকে তোলা হচ্ছে। মাটি কাটা ও আনা-নেওয়ার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা বলেন, রামকৃষ্ণদি এলাকার ইটভাটার মালিক ইকবাল হোসেন মাটি কেটে নিচ্ছেন। তবে ইকবাল বলেন, তিনি যেখান থেকে মাটি নিচ্ছেন সেগুলো অনাবাদি। কারও কাছ থেকে জোর করে নয় বরং টাকার বিনিময়ে মাটি নিচ্ছেন। এ ছাড়া যেসব জমির ওপর দিয়ে ট্রাক চলে, সেগুলোর মালিকদেরও টাকা দেওয়া হয়।

লতব্দি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, পাঁচ বছর আগেও ইউনিয়নের সর্বত্র ফসলি জমি ছিল। কয়েক বছর ধরে ইকবাল, জুয়েল, বরকত চক্রের ৭০ থেকে ৮০ জন ইউনিয়নের খিদিরপুর, চণ্ডীবর্দ্দী এলাকার মাটি কেটে নিচ্ছেন।

ইউনিয়নটির খিদিরপুর পূর্ব পাড়া এলাকার ধানের জমির ওপর দিয়ে বানানো হচ্ছে ট্রাক চলাচলের রাস্তা। জমির পাশ থেকে গভীর গর্ত করে কেটে নেওয়া হচ্ছে মাটি। ফাটল ধরেছে পাশের জমিগুলোতে। গর্ত করা স্থানের আশপাশে অন্তত ১০৫ শতক ধানের আবাদি জমি আছে।

মাটি খননকারী বরকত উল্লাহ কয়রাখোলা এলাকার ন্যাশনাল ব্রিকস নামে একটি ইটভাটার মালিক। তিনি বলেন, যেখান দিয়ে রাস্তা বানানো হয়েছে, সেখানকার কিছু জমি তিনি কিনে নিয়েছেন। এগুলোর পাশে সরকারি জমিও আছে। যেখান থেকে মাটি কাটা হচ্ছে সেটিও সাফকবলা করে নেওয়া হচ্ছে। বরকত উল্লাহ আরও বলেন, ‘এভাবে মাটি কাটার বিষয়টিকে আমিও সমর্থন করি না। তবে দেশের উন্নতির জন্য ইট দরকার, ইট বানাতে মাটি কাটা হচ্ছে।’

একইভাবে উপজেলার চণ্ডীবর্দ্দী এলাকায় জমির মাটি কেটে নিচ্ছেন জহিরুল ইসলাম নামে আরেকজন। তিনিও একটি ইটভাটার মালিক।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসনিম আক্তার গতকাল রোববার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, মাটি কাটার বিষয়ে কোনো কৃষকের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাননি।

লতব্দি ইউনিয়নের বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, মাটি কাটা বন্ধে তিনি উপজেলা প্রশাসনের কাছে একটি লিখিত আবেদন করেছেন।

সিরাজদিখানের ইউএনও শরিফুল আলম বলেন, মাটি কাটা বন্ধে জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হচ্ছে। কোনো এলাকায় মাটি কাটা হলে এই কমিটি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনকে জানাবে।