উপাচার্য নেই এক মাস, বেতন বন্ধ, বাড়ছে সেশনজট

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ছবি: সংগৃহীত

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পাবিপ্রবি) উপাচার্য পদের মেয়াদ শেষ হয়েছে ৬ মার্চ। মেয়াদ শেষের এক সপ্তাহ আগেই নানা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে চুপিসারে ক্যাম্পাস ছেড়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য এম রোস্তম আলী। ঘটনার এক মাস পার হলেও বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নতুন উপাচার্য নিয়োগ দেয়নি সরকার। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এখনো মার্চ মাসের বেতন পাননি। এ ছাড়া নতুন করে পরীক্ষা এবং আগের পরীক্ষার ফলাফল দেওয়া হচ্ছে না। এসব কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ সবাই বিপাকে আছেন।

এদিকে দীর্ঘ এক মাস বন্ধ থাকার পর গত ৩০ মার্চ রেজিস্ট্রারের দপ্তরের তালা খুলে দিয়েছেন কর্মকর্তারা। তবে উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রারসহ গুরুত্বপূর্ণ সব কটি পদ শূন্য থাকায় কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারছেন না চলতি দায়িত্বে থাকা রেজিস্ট্রার বিজন কুমার ব্রহ্ম। ফলে অভিভাবকশূন্য বিশ্ববিদ্যালয়টিতে দিনে দিনে সংকট বাড়ছে।

‘উপাচার্য ছাড়া কোন কিছুই সম্ভব না। চলমান সংকট নিরসনে দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ হওয়া প্রয়োজন।’
বিজন কুমার ব্রহ্ম, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (চলতি দায়িত্ব)

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপাচার্য এম রোস্তম আলী তাঁর মেয়াদকালে চরম স্বেচ্ছাচারিতা দেখিয়েছেন। তিনি নিজের স্বার্থ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কোনো দিকেই নজর দেননি। এতে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো ফাঁকা থেকে গেছে। অন্যদিকে বিভিন্ন বিভাগে প্রায় দুই বছরের সেশনজট তৈরি হয়েছে। শেষ পর্যন্ত মেয়াদ শেষের আগেই গত ২৬ ফেব্রুয়ারি নানা সমস্যা ঝুলিয়ে রেখে ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যান তিনি। এতে দীর্ঘদিনের সংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করে। রমজানে বেতন না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ব্যক্তিরা। শিক্ষক-কর্মকর্তারা কিছুটা সামাল দিতে পারলেও বেতন না হওয়ায় কর্মচারীরা বেশি সংকটে পড়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম জানান, সাবেক উপাচার্য প্রতিটি ক্ষেত্রে অনিয়ম করে গেছেন। প্রোগাম অফিসারকে বানিয়েছেন ব্যক্তিগত সহকারী, মেকানিককে দিয়েছেন ড্রাইভারের দায়িত্ব আর বড় কর্মকর্তাকে দিয়েছেন টয়লেট বাথরুমের দায়িত্ব। ফলে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়টি এলোমেলো হয়ে গেছে।

গত সোমবার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, বিভাগগুলো সব খোলা। ক্লাস চলছে, তবে পরীক্ষা বন্ধ। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ভালো। বিভাগের অফিসগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারীরা সবাই আছেন। প্রশাসনিক ভবনও বেশ সরব। তালা খুলে গেছে রেজিস্ট্রার দপ্তরের। তিনিও আছেন কার্যালয়েই। ঠিকঠাকই চলছে সব, তবে বেতন না হওয়ায় তাঁদের মুখটা মলিন।

শিক্ষার্থীরা জানান, ইতিমধ্যেই প্রতিটি বিভাগে প্রায় দুই বছরের সেশনজট চলছে। এর মধ্যে কয়েক মাস ধরে নতুন পরীক্ষা ও আগের পরীক্ষার ফলাফল বন্ধ রয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘমেয়াদি সেশনজট তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।