উপাচার্য ক্যাম্পাস ত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলন নিয়ে ব্রিফিং করছেন শিক্ষার্থীরা। আজ শুক্রবার বিকেলে ক্যাম্পাসের গোলচত্বর এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ক্যাম্পাস ত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আলপনা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে প্রতিবাদী কর্মসূচি অব্যাহত রাখা হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

আজ শুক্রবার বিকেল সোয়া চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে আন্দোলনকরী শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামিউল এহসান ও মোহাইমিনুল বাশার এসব কথা বলেন।

প্রেসব্রিফিংয়ে বলা হয়, ১৬ জানুয়ারির পুলিশি হামলার ঘটনায় আহত এবং অনশনরত অবস্থায় অসুস্থ শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার সব ব্যবস্থা গ্রহণ করায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। পুলিশের শর্টগানের ৮৩টি স্পিন্টারে আহত সজল কুন্ডুর উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ঢাকায় সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকারের নির্দেশনায় শিক্ষামন্ত্রী তাঁদের মূল দাবিসহ অনান্য দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার উদ্দেশ্যে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার আগ্রহ প্রকাশে সব শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে শিক্ষামন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।

শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে তাঁদের দাবি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন। এর মধ্যেই শিক্ষার্থীরা তাঁর সামনে উপস্থাপনের জন্য বেশ কিছু সমস্যা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছেন। শিক্ষার্থীরা এ সময় শিক্ষামন্ত্রীকে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানান।

উপাচার্যের পদত্যাগ দাবির আন্দোলন প্রসঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী মোহাইমিনুল বাশার বলেন, ‘উপাচার্য ক্যাম্পাস ত্যাগ করা পর্যন্ত প্রতিদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রোড পেইন্টিংয়ের মাধ্যমে আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমরা আমাদের আন্দোলনের ভাষা পরিবর্তন করেছি। সাংস্কৃতিক মাধ্যমে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কর্মসূচি নিয়েছি।’ তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ক্যাম্পাস ত্যাগ করার আগ পর্যন্ত ক্যাম্পাসে অবস্থান করে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনের অংশ হিসেবে শুক্রবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘রিম’ ও ‘নোঙর’ বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে প্রতিবাদী গান পরিবেশন করে। এর আগে সন্ধ্যার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে ‘চাষাভুষা টং’ নামে প্রতিবাদী টং স্থাপন করা হয়।

আরও পড়ুন

১৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়টির বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অসদাচরণসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী। একপর্যায়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ হামলা চালায়। পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা এবং তাঁদের লক্ষ্য করে শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। পরে ওই আন্দোলন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রূপ নেয়।

প্রথম ৬ দিনে দাবি পূরণ না হওয়ায় ১৯ জানুয়ারি বেলা ৩টা থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আমরণ অনশনে বসেন ২৪ শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে শুরু করা আমরণ অনশন ১৬৩ ঘণ্টা পর বুধবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ও লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল শিক্ষার্থীদের পানি পান করিয়ে ভাঙান।