উড়ে গেছে ঘরের চালা, সুখ নেই আশ্রয়ণের ঘরে

ঘরের মেঝের প্লাস্টার উঠে গেছে। বেসমেন্টে ইটের গাঁথুনির অংশসহ দেয়ালে দেখা দিয়েছে ফাটল।

ঝড়ে ঘরের চাল উড়ে গেছে। বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে ঘরগুলো। গত শনিবার দুপুরে দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের বিশ্বনাথপুর গ্রামে
ছবি: রাজিউল ইসলাম

বড় আশা নিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে উঠেছিলেন তাঁরা। মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়ে ছিলেন উৎফুল্ল। সেই উচ্ছ্বাস টেকেনি এক বছরও। বেশির ভাগ ঘর হয়ে পড়েছে বসবাসের অনুপযোগী, উড়ে গেছে টিনের চালা। ঠিক এমনই চিত্র দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের বিশ্বনাথপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোর।

উপজেলা শহর থেকে কালিয়াগঞ্জ শালবনের ভেতর দিয়ে চলে গেছে আঁকাবাঁকা পিচঢালা রাস্তা। ১৩ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে আড়াই কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা শেষে দেখা মেলে ঘরগুলোর। আশ্রয়ণের জায়গাটি গইলবাড়ি উত্তরপাড়া নামে পরিচিত।

গত বছরের ২৩ জানুয়ারি ঘরগুলো অসহায় ভূমিহীন ২৫টি পরিবারকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। উদ্বোধনের আগেই পাঁচটি ঘরের টিনের চালা ঝড়ে উড়ে যায়। দুই মাস পর আরও পাঁচটি ঘরের চালা উড়ে যায়। এর মধ্যে দড়ি দিয়ে টিন আটকে রেখে বসবাস করছে দুটি পরিবার। বাকি ১৫টি ঘরের অবস্থাও যাচ্ছেতাই। ঘরের মেঝের প্লাস্টার উঠে গেছে। বেসমেন্টে ইটের গাঁথুনির অংশসহ দেয়ালে দেখা দিয়েছে ফাটল।

আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে দেখা যায়, ২৫টি পরিবারের মধ্যে বর্তমানে আছে ১৯টি পরিবার। একটি পরিবার ওঠার কয়েক দিন পর চলে গেছে আগের ঠিকানায়। আর ঘর অনুপযোগী হওয়ায় পাঁচটি পরিবার এখনো উঠতেই পারেনি। বসবাসকারী ১৯টি পরিবারের মানুষের সংখ্যা ৬০–এর বেশি। এর মধ্যে উড়ে যাওয়া টিন দিয়ে ঘরগুলোর পাশে বেড়া করে খুপরি বানিয়ে সেখানে বসবাস করছে তিনটি পরিবার।

বসবাসকারী ব্যক্তিরা জানান, ঘরগুলো মেরামত না হওয়ায় উদ্বোধনের এক বছর পার হলেও পাঁচটি পরিবার এখনো উঠতেই পারেনি। যাঁরা বসবাস শুরু করেছেন, তাঁরাও পড়েছেন দুর্ভোগে। বসবাসকারী ব্যক্তিদের সবাই কৃষিশ্রমিক। ঘরগুলো মেরামতের জন্য লিখিত দিয়েছেন, একাধিকবার যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু ঘর মেরামতের উদ্যোগ নেয়নি কেউ।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা আক্তার বলেন, ‘কয়েক দিন আগে যে ঝোড়ো বাতাস হছিলো, তাতে ছেলেমেয়ে নিয়া ভয়তে আছি। এবারের শীতখান চলি গেইল, সামনোত বর্ষা আসোছে। কী হবি, তা কে জানে। আগের জায়গাত ফিরে যাবার উপায় নাই। যেই দিন উদ্বোধন করোছিল, সেদিন কহিলো মেরামত করি দিবে, কিন্তু কোনো খবর নাই। টিউবওয়েল গিলাও নষ্ট হই গেইছে।’

আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন, ফুলবানু, প্রতাপ চন্দ্র দাস, জয়নাল। প্রতাপ চন্দ্র দাস বলেন, ‘পাঁচ পরিবার এখনো উঠতে পারিনি। ঘর বুঝে দেবার আগেই টিনের চালা উড়ে যায়। হস্তান্তর করার সময় বলেছিল ঘরগুলো মেরামত করে দেওয়া হবে, কিন্তু দেয়নি। ফাঁকা ঘরে তো আর থাকা যায় না। তাই আমি ঘরে উঠিনি। অন্যের জায়গায় ঘর করে আছি।’

বিশ্বনাথপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোর নির্মাণকাজ তদারকির দায়িত্বে ছিলেন বর্তমান রংপুর সেনানিবাসের ২৫ বীর সাপোর্ট ব্যাটালিয়নের সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মো.মাইনুদ্দিন। মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘরগুলো প্রস্তুত করার পর সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের প্রতিনিধি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে বুঝে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে ঘূর্ণিঝড় বা কোনো প্রাকৃতিক সমস্যা হয়েছে কি না, সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়।’

ইউএনও মাহমুদা সুলতানা বলেন, বিষয়টি অবগত আছেন তাঁরা। আশ্রয়ণ প্রকল্পটি পরিদর্শন করা হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। বাজেট পাওয়া সাপেক্ষে সংস্কারকাজ করা হবে। এক বছরেও সংস্কারকাজ সম্পন্ন হয়নি, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, শুরুতেই লিখিতভাবে আবেদন জানানো হয়েছে। বিষয়টির জন্য অপেক্ষা করতে হবে।