‘এই মজুরি দিয়া কি সংসার চলে’

চা-বাগানের বাজারে চলছে বেচাকেনা। বুধবার মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের ভাড়াউড়া চা-বাগান বাজারে
ছবি: শিমুল তরফদার

নারী চা-শ্রমিক শ্যামলীর সপ্তাহে নির্ধারিত মজুরি ৭৪০ টাকা। এর মধ্যে আবার কেটেকুটে হাতে পান ৬০০ টাকা। এই টাকা দিয়ে সপ্তাহ চালিয়ে নিতে হয় তাঁকে। বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয়ে শ্যামলী বলেন, ‘সবজির দাম বেশি, তেলের দাম বেশি, চালের দাম বেশি। এখন কোনটা ছেড়ে কোনটা কিনব?’ মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভাড়াউড়া চা-বাগানের বাজারে গত বুধবার আলাপ হয় শ্যামলীর সঙ্গে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সারা দেশে নিম্ন আয়ের মানুষের মতো চা-শ্রমিকেরাও বিপাকে আছেন। দীর্ঘদিন ধরে মজুরি বৃদ্ধি না পাওয়ায় চা-শ্রমিকদের মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে।

শ্রমিকেরা জানান, এমনিতেই তাঁদের জীবন দুর্বিষহ। এর মধ্যে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যেন ‘মড়ার উপর খাড়ার ঘাঁ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চা-শ্রমিক শ্যামলী আরও বলেন, সপ্তাহে সাবান লাগে, তেল লাগে, চাল লাগে, বাচ্চাকাচ্চার পড়াশোনাসহ কত খরচ লাগে। এই মজুরি দিয়ে চলে না। চা-শ্রমিকদের এমনিতেই অভাব-অনটন লেগে থাকে। এর মধ্যে দিন দিন যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, তাতে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে গেছে।

বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাস থেকে শ্রমিকেরা দিনে ১২০ টাকা মজুরি পাচ্ছেন। মালিকপক্ষের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, মজুরি বৃদ্ধি হওয়ার কথা থাকলেও সেটা বাড়েনি।

বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বালিশিরা ভ্যালী সভাপতি বিজয় হাজরা প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে শ্রমিকদের অবস্থা খুবই খারাপ। শ্রমিকেরা দিনে যে ১২০ টাকা মজুরি পান, সেটা তাঁদের জিনিসপত্র ক্রয় করার ক্ষমতার বাইরে। মালিকপক্ষের সঙ্গে তাঁদের চুক্তি রয়েছে মজুরি বৃদ্ধি করার। সেই চুক্তি অনুযায়ী দ্রুত মজুরি বৃদ্ধি করা দরকার। মজুরি বৃদ্ধি না হলে শ্রমিকেরা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়বেন।

বাচ্চাকাচ্চা নিয়া চলা অনেক কঠিন। পেট ভরে ভাত খাওয়াও অনেক কষ্টকর। এই মজুরি দিয়া কি সংসার চলে?
হারাধন, চা-শ্রমিক

চা-বাগানে শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া হয় প্রতি সপ্তাহের বুধবার। এদিন প্রায় প্রতিটি চা-বাগানে সাপ্তাহিক হাট বসে। স্থানীয় ব্যক্তিরা একে তলব বাজার বলে থাকেন। গত বুধবার ভাড়াউড়া চা-বাগানের বাজার শ্রমিকদের বাজার করতে দেখা গেল। টাকার অভাবে বেশির ভাগ শ্রমিক প্রয়োজনীয় অনেক জিনিসই কিনতে পারেননি। ওই বাজারে প্রতি কেজি চাল ৪০-৭০ টাকা, পেঁয়াজের কেজি ৩৫ টাকা, তেল ১৯৫-২০০ টাকা লিটার, মসুর ডাল ১২০ ও রসুন ৬০ টাকা কেজি, শুকনা মরিচ ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়।

প্রতি সপ্তাহে বুধবার চা বাগানে হাট বসে, চলে বেচাকেনা। বুধবার মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের ভাড়াউড়া চা-বাগান বাজারে
ছবি: প্রথম আলো

চা-শ্রমিক কাজল হাজরা বলেন, বাজারে সবকিছুর দাম বেশি। তেলের দাম সবচেয়ে বেশি। রান্নার কাজে তেলই বেশি লাগে। সরকার তেলের দাম দিন দিন বাড়িয়েই চলেছে।

হারাধন নামে আরেক চা-শ্রমিক বলেন, বাজার থেকে সবজি, পেঁয়াজ ও মসলা তেল নিয়েছেন ৪৪০ টাকায়, মাছ কিনেছেন ১২০ টাকায়। মজুরি পেয়েছেন ৬০০ টাকা। তিনি আরও বলেন, ‘সারা সপ্তাহের চাল এখনো কেনা হয় নাই। অনেক কিছু কেনা বাকি। বাচ্চাকাচ্চা নিয়া চলা অনেক কঠিন। পেট ভরে ভাত খাওয়াও অনেক কষ্টকর। এই মজুরি দিয়া কি সংসার চলে?’