একই সড়ক একে একে ১০ বার কাটল দুর্বৃত্তরা, গ্রেপ্তার ৩

কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরের লক্ষ্মীপুর বাজার–মাতুয়ারকান্দা গ্রাম পর্যন্ত এই কাঁচা সড়কটির কয়েকটি স্থানে দুর্বৃত্তারা কেটে ফেলে। গতকাল রোববার সকালে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার গোবরিয়া আবদুল্লাহপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর বাজার থেকে মাতুয়ারকান্দা গ্রাম পর্যন্ত কাঁচা সড়কটির দৈর্ঘ্য এক কিলোমিটার। দুই বছর আগে উপজেলা পরিষদ প্রায় ২৫ লাখ টাকা খরচ করে নতুন সড়কটি মানুষের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে। এই সময়ের ব্যবধানে অন্তত ১০ বার কে বা কারা সড়কটি কেটে ফেলে। সর্বশেষ গত শনিবার রাতে আবার সড়কটি কাটা হয়। এতে সড়কটি এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

তবে সর্বশেষ সড়ক কেটে ফেলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পুলিশ গতকাল রোববার তিন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। ওই তিনজনকে আজ সোমবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।

সাইদুজ্জামান ইউনিয়নটির ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য। সড়কটির অবস্থান ২ নম্বর ওয়ার্ডে। যাঁদের নেতৃত্বে সড়কটি হয়, তাঁদের মধ্যে তিনি একজন।

সাইদুজ্জামান বলেন, সড়কটি ঘিরে পক্ষ দুটি। একটি পক্ষের কাজ রাতে সড়ক কেটে ফেলা। অপর পক্ষটির দায়িত্ব দিনের বেলায় স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামত করা।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, লক্ষ্মীপুর বাজার থেকে মাতুয়ারকান্দা গ্রাম ঘেঁষে গেছে জিরা নদী। লক্ষ্মীপুর বাজারে যেতে হলে এতদিন কিছু মানুষকে নদী ঘেঁষে পায়ে হেঁটে চলাফেরা করতে হতো। স্বাধীনতার পর থেকে ইউনিয়নটির মাতুয়ারকান্দা, পশ্চিম আবদুল্লাহপুর ও বীরকাশিম নগরের একাংশের মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে চলেছিল। এই অবস্থায় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ইয়াছির মিয়া সড়ক নির্মাণে উদ্যোগী হন। তিনি তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্বাস উদ্দীন ও ইউপি সদস্য সাইদুজ্জামানকে সঙ্গে নিয়ে ১২ ফুট প্রস্থের সড়কটি নির্মাণ করেন। সড়কটির নামকরণ করা হয় সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের নামে জিল্লুর রহমান সড়ক। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর এই সড়ক দিয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল শুরু করে।
তবে নির্মাণ উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকে ওই এলাকার দুটি পক্ষ হয়। মাতুয়ারকান্দা গ্রামবাসী ছিলেন সড়ক নির্মাণের পক্ষে। বিপক্ষে অবস্থান ছিল লক্ষ্মীপুর কোনাবাড়ির লোকজনের।

কোনাবাড়ির লোকজনের দাবি, সড়ক নির্মাণ করায় তাঁদের বাড়ির লোকজনের ফসলি জমির ক্ষতি হয়েছে। জমি গেলেও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। এ কারণে তাঁরা নির্মাণকাজ বন্ধ করতে চাইলে মাতুয়ারকান্দা গ্রামবাসী প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এ ঘটনায় মাতুয়ারকান্দা গ্রামবাসীর সঙ্গে কোনাবাড়ির লোকজনের একাধিকবার সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে কোনাবাড়ির নুরু মিয়া ও মুমিন মিয়া নামের দুই ব্যক্তি মারা যান। উভয় পক্ষের মামলা সংখ্যা পাঁচ।

এই অবস্থায় নির্মাণের এক মাস যেতে না যেতেই রাতে কয়েকটি স্থানে মাটি কেটে ফেলা হয়। এরপর দুই মাসের ব্যবধানে গড়ে একবার করে সড়ক কাটা হচ্ছে। শনিবার রাতে কয়েকটি স্থানে মধ্যভাগ থেকে মাটি সরিয়ে সড়ক বিভক্তি করে ফেলা হয়। এরপর থেকে সড়কটি দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে কয়েক হাজার মানুষের চলাচলে দুর্ভোগ বাড়ে।

এদিকে ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল বিকালে মাতুয়াকান্দা গ্রামবাসী স্থানীয় একটি মাঠে সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলন থেকে সড়ক কেটে ফেলার জন্য কোনাবাড়ির লোকজনকে দায়ী করা হয়। পক্ষটির দাবি ব্যক্তিগত স্বার্থ, আধিপত্য আর রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বারবার একটি পক্ষের আগ্রাসনের শিকার হচ্ছে সড়কটি।

উপজেলা চেয়ারম্যান ইয়াছির মিয়া বলেন, ‘কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্কুলে যেতে কষ্ট হচ্ছে-এই দৃশ্য আমার চোখে পড়ে। একদা আমাদের সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ওই গ্রামে গিয়েছিলেন। তখন সড়ক না থাকায় গ্রামবাসী তাঁকে কোলে করে নিয়েছিলেন। এসব আমার মনে দাগ কাটে। তখনই ওয়াদা করেছিলাম সড়ক করার। করেছি। কিন্তু এখন ধরে রাখতে পারছি না।’

কুলিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম মস্তুফা জানান, সড়ক কেটে ফেলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে ধরে আনা হয়েছে। ওই তিনজন তাঁকে জানিয়েছেন সড়ক নির্মাণ করায় কোনাবাড়ির লোকজন অধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লাভবান হয়েছেন মাতুয়ারকান্দা গ্রামবাসী। মূলত চাওয়া পাওয়ার হিসাব থেকে দিন দিন সমস্যাটি বড় হচ্ছে।