একটি বিদ্যালয়ের অপমৃত্যু

গত বছরের অক্টোবরের ঝড়ো বাতাসে বিদ্যালয়ের ঘরটি ভেঙে পড়েছে
ছবি: প্রথম আলো

সবুজ ধানখেতের মাঝে একটি চালাঘর মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। চালাঘরটি ঠাকুরগাঁওয়ের সদর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের গ্রামডাঙ্গী বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। কয়েক মাস আগেও বিদ্যালয়টি শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে প্রাণবন্ত ছিল। তবে গত বছরের অক্টোবরের ঝড়ো বাতাসে বিদ্যালয়ের ঘর ভেঙে পড়ে। অর্থসংকটের কারণে ঘরটি মেরামত করতে পারেনি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

চলতি বছর বিদ্যালয়টি নতুন কোনো শিক্ষার্থী পায়নি। অপেক্ষায় থেকে শিক্ষকেরাও বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। তাই পাঁচ মাস ধরে বিদ্যালয়টির কার্যক্রম বন্ধ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৫ সালে স্থানীয় কয়েকজন শিক্ষানুরাগী গ্রামডাঙ্গী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। ওই গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার জন্য ৪০ শতাংশ জমি দান করেন। পরে স্থানীয় লোকজনের আর্থিক সহায়তায় ওই জমিতে একটি টিনের চালার ভবন করা হয়। ভবনে মোট চারটি কক্ষ ছিল।

ওই সময় চারজন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে গ্রামডাঙ্গী বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করা হয়। ১৯৯৭ সালে বিদ্যালয়টি শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর অনুমতি পায়। উপবৃত্তির ব্যবস্থা করতে না পারায় ২০১২ সালে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের থেকে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা দেয়নি। এতে ২০১৩ সালে আশপাশের অনেক বিদ্যালয় জাতীয়করণের আওতায় এলেও বিদ্যালয়টি সেই সুযোগ পায়নি।

অর্থসংকটের কারণে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঘরটি মেরামত করতে পারছেনা বলে জানা গেছে
ছবি: প্রথম আলো

সরেজমিন দেখা যায়, জমিতে পড়ে থাকা গ্রামডাঙ্গী বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঘর ঘেঁষে চলছে গম, ধান ও ভুট্টার আবাদ। ওই বিদ্যালয় থেকে শারমিন আক্তার তৃতীয় শ্রেণি পাস করে পাশের সিন্দুর্ণা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে।

শারমিন বলে, ‘আগে তো এই স্কুলেই পড়তাম। কিন্তু স্কুলের ঘর ভাঙা ঘর ঠিক করে না, ক্লাসও হয় না। তাই অন্য স্কুলে যেয়ে ভর্তি হয়েছি। এখন প্রায় এক কিলোমিটার হেঁটে ওই স্কুলে যেতে হয়।’

গ্রামডাঙ্গীর বাসিন্দা রিয়াজুল ইসলাম বলেন, চোখের সামনে বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কয়েক দিন পর ভাঙা চালাঘরটিও হারিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রতিমা রানী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকেরা কোনো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় নিজেরাই বিদ্যালয়ের ঘর সংস্কার করে পাঠদান চালু রেখেছিলেন। ঝড়ে ঘরটি ভেঙে পড়ায় আর সংস্কার করা যায়নি। এই অবস্থায় শিক্ষার্থীরাও বিদ্যালয় ছেড়ে অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। শিক্ষার্থী না থাকায় শিক্ষকেরাও বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আনিসুর রহমান বলেন, ইচ্ছা থাকলেও ঘর নির্মাণ বা সংস্কার করে বিদ্যালয় চালু করার সামর্থ্য নেই। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় বিত্তবানদের এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হারুনর রশিদ বলেন, বিদ্যালয়টি সম্পর্কে তাঁর তেমন কিছু জানা নেই। এ বিষয়ে তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানান।