এক পথ বন্ধ, আরেকটিতে ভোগান্তি

  • পদ্মা সেতুর তিনটি পিলারে চারবার ফেরির ধাক্কা লাগে। দুর্ঘটনা এড়াতে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি বন্ধ রয়েছে।

  • বিকল্প হিসেবে মাঝিকান্দিতে ফেরি চালুর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে স্রোত কম থাকলেও চর বেশি।

পদ্মায় তীব্র ঘূর্ণিস্রোত থাকায় মাদারীপুরের বাংলাবাজার ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে টানা এক মাস ধরে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) বলছে, স্রোতের তীব্রতা না কমলে ফেরি চালু হবে না। ফলে ফেরি চালুর নির্দিষ্ট তারিখ কেউ বলতে পারছেন না।

ফেরি বন্ধ থাকায় এই নৌপথের যাত্রী ও পরিবহনশ্রমিকেরা রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া হয়ে রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করছেন। প্রয়োজনের তুলনায় ফেরি ও ঘাটের স্বল্পতার কারণে দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া ঘাটে যানবাহনের লম্বা সারি তৈরি হয়েছে। এতে ঘাটে আটকে থাকা যানবাহনের যাত্রী ও চালকেরা ভোগান্তিতে পড়েছেন।

এক মাস ধরে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি বন্ধ। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় ঘাট ও ফেরির সংকটে বেড়েছে ভোগান্তি

দুই প্রান্তে যানবাহনের দীর্ঘ সারি

ঘাটসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাপ্তাহিক ছুটির কারণে রাজধানী ছেড়ে অনেকেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দিকে ছুটছেন। দৌলতদিয়ার সাতটি ঘাটের মধ্যে পাঁচটি চালু রয়েছে। ৩ ও ৪ নম্বর ঘাটটি নদীভাঙনের কবলে পড়ায় ও নদীর স্রোতের কারণে তেমন সক্রিয় নেই। ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ঘাট দিয়ে সব ধরনের গাড়ি পারাপার হচ্ছে। অন্যদিকে পাটুরিয়া প্রান্তে তিনটি ঘাট সচল থাকায় সেখানেও ঘাটস্বল্পতা রয়েছে। ফলে পাটুরিয়া প্রান্তে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকায় গাড়ির সারি তৈরি হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে দৌলতদিয়া ঘাট ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দৌলতদিয়া ঘাট থেকে গোয়ালন্দের পদ্মার মোড় পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার লম্বা লাইনে ঢাকাগামী যানবাহন আটকে আছে। এই সারিতে শতাধিক দূরপাল্লার বাস, পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, মাইক্রোবাস, ব্যক্তিগত গাড়ি ও রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স আটকে থাকতে দেখা যায়।

বাংলাদেশ হ্যাচারিজ এলাকার সামনে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের উপপরিদর্শক (টিএসআই) বিনয় চক্রবর্তী বলেন, ফেরিগুলো তুলনামূলক কম গতিতে চলাচল করছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় গাড়ির চাপও একটু বেশি। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাত্রীবাহী গাড়ি আগে ছেড়ে দেওয়ায় সাধারণ পণ্যবাহী গাড়ি পার হতেও সময় লাগছে।

বরিশাল থেকে আসা বাসচালক মো. মিন্টু মিয়া জানান, ফেরিতে ওঠার জন্য তিনি প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছেন। গরমের মধ্যে যাত্রী নিয়ে বসে থাকতে থাকতে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন।

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক জামাল হোসেন বলেন, বর্তমানে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ১৯টি ফেরি চলছে। ঘাট ও ফেরিসংকটে দুই প্রান্তে যানবাহন আটকে থাকছে।

পদ্মায় পানি কমলেও স্রোত কমেনি

বর্তমানে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে যাত্রী পারাপারে একমাত্র ভরসা লঞ্চ। তাও সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত চলাচল করছে। দুর্ঘটনা এড়াতে রাতের বেলায় লঞ্চ চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রাখা হচ্ছে।

বিআইডব্লিউটিসি সূত্র জানায়, বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে ১৮-২০টি ফেরি রয়েছে। গত জুলাই ও আগস্ট মাসে পদ্মায় তীব্র স্রোত অব্যাহত থাকায় পদ্মা সেতুর তিনটি পিলারে চারবার ফেরির ধাক্কা লাগে। দুর্ঘটনা এড়াতে গত ১৮ আগস্ট থেকে এই নৌপথে ফেরি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ফেরি বন্ধের এক মাসে পদ্মায় স্রোতের গতি না কমলেও পানির উচ্চতা অনেকটা কমেছে।

বিআইডব্লিউটিসি শিমুলিয়া ঘাটের মেরিন কর্মকর্তা আহমদ আলী বলেন, পদ্মায় পানি কমলেও স্রোত কমেনি এখনো। পদ্মায় এখনো ঘণ্টায় ৪ দশমিক ৭৮ নটিক্যাল মাইল বেগে স্রোত চলছে। স্রোতের বেগ ঘণ্টায় দুই বা আড়াই নটিক্যাল মাইলে এলে তখন ফেরি চলতে পারবে।

গতকাল দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, অনেকটাই সুনসান বাংলাবাজার ফেরিঘাট। ঘাটের পন্টুনের পাশে কয়েকটি ডাম্ব ফেরি নোঙর করে রাখা রয়েছে। ফেরি না চলায় কোনো গাড়িও এখন আর পারাপারের জন্য এই ঘাটে ভিড়ছে না। যাত্রীরা যাঁরা ঘাটে আসছেন, তাঁরা লঞ্চঘাটের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন।

চালু হয়নি বিকল্প নৌপথ

বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ হওয়ার পর বিকল্প নৌপথ হিসেবে বাংলাবাজার ঘাটের পার্শ্ববর্তী শরীয়তপুরের মাঝিকান্দি-শিমুলিয়া নৌপথকে ভাবা হয়েছিল। ওই নৌপথ চালুর জন্য মাঝিকান্দিতে রো রো ফেরির পন্টুন বসানো হলেও তা চালু হয়নি। এই নৌপথে নৌ-চ্যানেলে একাধিক ডুবোচর থাকায় ফেরি চালানো সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিসি।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. তাজুল ইসলাম গতকাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বিকল্প নৌপথ হিসেবে মাঝিকান্দিতে ফেরি চালুর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে স্রোত কম থাকলেও চর বেশি। সেখানেও ফেরি চালানো যাচ্ছে না।

বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি চালুর বিষয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘স্রোত না কমলে ফেরি ছাড়া যাবে না। তাই আমরা বিকল্প পথ হিসেবে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় সব যানবাহন পারাপার করছি। এই পথে কিছুটা দুর্ভোগ হলেও এ অবস্থায় কিছুই করার নেই।’ খুব শিগগির পরীক্ষামূলকভাবে এই নৌপথে ফেরি চালু করার চিন্তা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।