এখনো অন্যের ঘরে থাকছেন কোহিনূররা

পঞ্চাশোর্ধ্ব মীর হোসেন দিনমজুরের কাজ করেন। কাজ পেলে টাকা মেলে। যেদিন কাজ থাকে না, সেদিন বেকার কাটাতে হয়। স্ত্রী কোহিনূর বেগম (৩৫) আর তিন মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে তাঁর সংসার। ছোট একটা টিনের ঘরে সবাইকে নিয়ে থাকতেন। বন্যার পানিতে বসতঘরের বেড়া ভেঙে গেছে। চাল ও মেঝে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাকার অভাবে ঘরও সংস্কার করতে পারছেন না। ফলে থাকছেন অন্যের ঘরে। এ অবস্থায় তিনি সরকারের কাছে বসতঘর সংস্কারে সহযোগিতা চেয়েছেন।

মীর হোসেনের বাড়ি সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার কাঁঠালবাড়ি গ্রামে। তাঁর স্ত্রী কোহিনূর জানান, পরিবারে তাঁর স্বামীই একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি। তাঁর যে টাকা আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। ১৪ মে থেকে সৃষ্ট বন্যায় বসতঘরটি বিধ্বস্ত হলে তাঁরা আশ্রয়কেন্দ্রে চলে গিয়েছিলেন। পানি কমায় তাঁরা গ্রামে ফিরলেও নিজের ঘরে উঠতে পারেননি। টাকার অভাবে তাঁরা নিজেদের ঘর সংস্কার করতে পারছেন না। সরকার বা কারও সহযোগিতা না পেলে তাঁদের পক্ষে ঘরটি পুনর্নির্মাণ করা অসম্ভব।

কোহিনূরদের মতো এমন অবস্থা সিলেট জেলার অনেক দরিদ্র পরিবারের। বানের পানিতে বসতঘর বিধ্বস্ত হয়ে পড়ার পর টাকার অভাবে অনেকেই ঘর সংস্কার করে আবার বসবাসের উপযোগী করে তুলতে পারছেন না। ফলে তাঁরা সরকারি সহায়তা পাওয়ার আশা করছেন। অবশ্য কেউ কেউ ধারকর্জ করে বসতঘর সংস্কার করে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে চলছেন।

জকিগঞ্জের বারহাল ইউনিয়নের কোনাগ্রামের বাসিন্দা রানা মালাকার (৪৩) দিনমজুরের কাজ করেন। সুরমা নদীর পাড়েই তাঁর বাড়ি। পাহাড়ি ঢলে তাঁর টিন-বাঁশের তৈরি বাড়িও বিধ্বস্ত হয়। এরপর মা, স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে বিপাকে পড়েন। বড় মেয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে এবং ছোট মেয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় ধারকর্জ করে কোনোরকমে ঘরটি বসবাসের কিছুটা উপযোগী করেছেন। তবে সম্পূর্ণ সংস্কার করতে আরও টাকার প্রয়োজন।

রানা মালাকার জানান, প্রতি মাসে তাঁর ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা আয় হয়। এ দিয়ে সংসার চালানোই কষ্টকর। এখন ঘর বিধ্বস্ত হওয়ায় আরও বিপদে পড়েছেন। কয়েক বছর আগে তাঁর পেটে অস্ত্রোপচার হয়েছে, শারীরিকভাবেও তিনি প্রতিবন্ধী। এ অবস্থায় বন্যায় তাঁকে আরও পথে বসিয়েছে। কীভাবে ঘরটি মেরামত করবেন, সে চিন্তায় তিনি অস্থির।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় জানিয়েছে, জেলায় কী পরিমাণ বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এর তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। ৪ থেকে ৫ দিনের মধ্যেই এ তালিকা চূড়ান্ত হবে। তবে আনুমানিক জেলার ৩৩৮টি বসতঘর সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর বাইরে ৩ হাজার ৯০৯টি বসতঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব বসতঘর বিধ্বস্ত হওয়ায় কত টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেটা এখনো তারা নির্ধারণ করতে পারেনি। এর বাইরে সিলেট নগরে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ঘরের তালিকা তৈরিতে সিটি কর্তৃপক্ষ তথ্য সংগ্রহ করছে।

সিলেটের জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. নূরুল ইসলাম বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বসতঘরের মালিকদের নাম-ঠিকানাসহ পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির কাজ চলমান আছে।