এর আগেও যাত্রীদের রেখে পালিয়েছিলেন চালক-কর্মচারীরা

গত আগস্টে বিষখালী নদীর ডুবোচরে আটকে যায় যাত্রীবাহী লঞ্চ অভিযান-১০
ছবি: প্রথম আলো

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীটি প্রস্থে তেমন বড় নয়। মাঝনদীতে অভিযান-১০ লঞ্চে আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে চালক পাড়ে নোঙর করতে পারতেন। তা না করে চালকসহ কর্মচারীরা লঞ্চ ফেলে পালিয়ে যান। অগ্নিকাণ্ডের পর যাত্রীদের এমন অভিযোগ ছিল। বিষয়টি উঠে আসে ফায়ার সার্ভিসের প্রাথমিক তদন্তেও।

চলতি বছরের আগস্টেও অভিযান-১০ লঞ্চটি ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে বরগুনায় যাওয়ার পথে ঝালকাঠির রাজাপুরে বিষখালী নদীর ডুবোচরে আটকে যায়। ১২ আগস্ট গভীর রাতে যাত্রীদের লঞ্চে রেখেই পালিয়ে গিয়েছিলেন চালক ও কর্মচারীরা। তখন লঞ্চটিতে থাকা যাত্রীরা এমন অভিযোগ করেছিলেন।

১২ আগস্টের ওই ঘটনা নিয়ে পরদিন ১৩ আগস্ট প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় প্রথম আলোয়। সে প্রতিবেদনে আটকে যাওয়া যাত্রীরা অভিযোগ করেছিলেন, শাহরুখ-২ নামের একটি লঞ্চের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যাচ্ছিল অভিযান-১০। পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় তা ডুবোচরে আটকে যায়। চার শতাধিক যাত্রীকে তখন গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা না করেই চালক ও কর্মচারীরা পালিয়ে যান।

আরও পড়ুন

পরদিন শুক্রবার সকালে যাত্রীরা লঞ্চ থেকে নেমে নিজ খরচে গন্তব্যে চলে যান। ডুবোচরে লঞ্চটি ১০ দিন আটকা থাকার পর ডকইয়ার্ডে নিয়ে নতুন ইঞ্জিন সংযোজনসহ আধুনিকায়ন করা হয়।

২৩ ডিসেম্বর রাতে লঞ্চটিতে আগুন লাগার সময়ও চালক–কর্মচারীরা মাঝনদীতে লঞ্চ রেখে ঝালকাঠি সদরের চরভাটারকান্দা গ্রামে পালিয়ে যান।

গত বৃহস্পতিবার রাতে সুগন্ধা নদীতে আগুন লাগে অভিযান–১০–এ
ছবি: সংগৃহীত

প্রত্যক্ষদর্শী ও চরভাটারকান্দা গ্রামের কৃষক বেলায়েত হোসেন বলেন, গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে লঞ্চটিতে আগুন ছড়িয়ে পড়লে চালক চরভাটারকান্দা গ্রামের চরে ভেড়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু উচ্চ জোয়ারের চাপে লঞ্চটি সেখানে ভিড়তে পারেনি। পরে সেখানে দুই শতাধিক যাত্রী নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে লঞ্চটির চালক ও কর্মচারীরা সেখানে নেমে পালিয়ে যান। পরে চালকবিহীন লঞ্চটি নদীতে ভেসে ওপারের দিয়াকুল গ্রামে গিয়ে থেমে যায়। সেখানে ভিড়তে ৪০ মিনিট সময় লেগে যায়। এ সময়ের মধ্যে প্রাণহানি অনেক বেড়ে যায়।

এ ঘটনার তদন্ত করছে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল। গতকাল রোববার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান ঝালকাঠি লঞ্চঘাটে পুড়ে যাওয়া লঞ্চটি পরিদর্শন করেন। তিনিও তখন সাংবাদিকদের বলেন, ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীটি তেমন বড় নয়। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে চালক একটি পাড়ে নোঙর করতে পারতেন। তখন মানুষ লাফিয়ে তীরে আসত। কিন্তু চালক তা না করে যাত্রীদের আগুনের মধ্যে ফেলে রেখে চলে যান।