ঐতিহ্য ফেরানোর চেষ্টা

পাঠাগারে শুধু চালু রয়েছে দৈনিক পত্রিকা পড়ার কার্যক্রম
ছবি: মঈনুল ইসলাম

রংপুরের ইতিহাস-ঐতিহ্য, শিক্ষা-সংস্কৃতির অনুসন্ধান করতে গেলে ঘুরেফিরে আসে পাবলিক লাইব্রেরির নাম। তবে যে পাঠাগার একসময় এই অঞ্চলের শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, সেই পাঠাগারে বই পড়া বন্ধ রয়েছে গত ১৩ বছর।

রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি ভবনটির প্রাচীন স্থাপত্যরীতি আলাদা মনোযোগ দাবি করে। কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রাচীন এই পাঠাগার। সম্প্রতি এটি সংস্কার করা হয়েছে।

রংপুর জেলার একাধিক ইতিহাসগ্রন্থের তথ্য বলছে, রঙ্গপুর থেকে হয়েছে আজকের রংপুর। রঙ্গপুর মহকুমা ছিল কুচবিহার জেলার অধীন। এই জনপদে সাহিত্যচর্চার কমতি ছিল না। কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এসেছেন এখানে। এসেছেন নেতাজি সুভাষ বসু। কাজ করেছেন সমাজসেবক রাজা রামমোহন রায়। বাংলা নাট্যাঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্র শিশির ভাদুড়ী, অর্ধেন্দুশেখর মুস্তফীসহ আরও অনেকেই এসেছেন রংপুরে।

এই পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেন কুন্ডীর জমিদারেরা
ছবি: প্রথম আলো

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি ভবনটি সংস্কার করা হয়েছে। লাইব্রেরির সামনে বড় মাঠ, সেখানে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। লাইব্রেরি ভবনের দুটি কক্ষের পরিবেশ বেশ নিরিবিলি। চারদিকে গাছগাছালির ছায়া। সংশ্লিষ্টরা জানালেন, ভবনের অংশসহ এই চত্বরের জমির পরিমাণ ১৬০ শতাংশ। এর মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশের ওপর লাইব্রেরি ভবন। এর পাশে রয়েছে ৮০ আসনের একটি মিলনায়তন।

২০০৮ সাল থেকে লাইব্রেরিয়ান নেই। তখন থেকে পাঠাগারে বসে বই পড়া বন্ধ রয়েছে। শুধু চালু রয়েছে দৈনিক পত্রিকা পড়ার কার্যক্রম। যত্নের অভাবে কিছু বই নষ্ট হয়ে যায়। চুরিও হয়েছে কিছু। এরপরও পাঠকেরা বারবার ফিরে আসছেন। দূরদূরান্ত থেকে দর্শনার্থীও আসেন ঘুরে দেখতে। সোমবার ছাড়া প্রতিদিন খোলা থাকে বিকেল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। রবীন্দ্র গবেষক শাশ্বত ভট্টাচার্য বলেন, ‘অবিভক্ত ভারতবর্ষের পাঁচটি প্রাচীন লাইব্রেরির মধ্যে এটি একটি। আমাদের নিজেদের প্রয়োজনে এই লাইব্রেরিকে টিকিয়ে রাখতে হবে।’ বাংলাপিডিয়ার তথ্যমতে, জেলার প্রাচীনতম এই পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেন কুন্ডীর জমিদারেরা, ১৮৩২ সালে।

লাইব্রেরির কেয়ারটেকার আজিজুল ইসলাম জানালেন, এখানে সাড়ে পাঁচ হাজার বই রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য এনসাইক্লোপিডিয়া, রবীন্দ্রসমগ্র, কয়েক খণ্ডের পাকিস্তান-ভারতের ইতিহাসগ্রন্থ, পুরাতন অনেক পঞ্জিকা, বাংলাপিডিয়ার সব কটি খণ্ডসহ অনেক মূল্যবান বই। কিছু বই নতুন করে বাঁধাই করা হয়েছে। মাঝেমধ্যে তিনি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেন।

আজিজুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন নিয়মিত লাইব্রেরি খুললেই অনেক মানুষ আসে বই পড়ার জন্য। তাঁরা বই না পেলেও পত্রিকা পড়ছেন। এ ছাড়া দূরদূরান্ত থেকে কেউ কেউ ঘুরতেও আসেন।

পাবলিক লাইব্রেরির দুটি কক্ষে ১৭টি আলমারি রয়েছে। এর মধ্যে চারটি আলমারি প্রাচীন কালের। প্রতিটি আলমারিতে বই গুছিয়ে রাখা। একটি কক্ষে প্রাচীন আমলে তৈরি শাল কাঠের টেবিল এখনো চকচকে। পাঠকেরা এখানে দৈনিক পত্রিকা পড়েন। পাঠরত অবস্থায় দেখা গেল নাট্যকর্মী ও কবি মাহমুদ নাসিরকে। তিনি বললেন, ‘প্রায় দিনই এখানে আসা হয়। নিরিবিলি পরিবেশ। পত্রিকা পড়ি। এখন বই পড়া কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তা পড়তে পারছি না। পুনরায় চালু হলে সবার জন্য ভালো হতো।’

পাঠাগারটির দেখভাল করে জেলা প্রশাসন। এটি পরিচালনার জন্য ২১ সদস্যের একটি কমিটি রয়েছে। পদাধিকার বলে কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক আসিব আহসান। সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন।

জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, লাইব্রেরি পরিচালনার জন্য একটি কার্যনির্বাহী কমিটিসহ উপদেষ্টা পরিষদ রয়েছে। ভবনটি ইতিমধ্যে সংস্কার করা হয়েছে। পাঠকেরা সুন্দর পরিবেশে যাতে বইসহ দৈনিক পত্রিকা পড়তে পারেন, সে ব্যবস্থাও করা হয়েছে। খুব শিগগির পাঠকের জন্য বই পড়ার কাজটিও শুরু করা হবে।