কথায় কথায় মারামারি বন্ধে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ দিয়ে কাউন্সেলিং করা হবে

কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শিদলাই গ্রাম। এ গ্রামে বড় দল ও ছোট দল নামে দুটি পক্ষ বংশপরম্পরায় ছোটখাটো বিষয় নিয়ে মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। এতে প্রাণহানি, পাল্টাপাল্টি মামলা, হয়রানি ও বসতঘর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে হরহামেশাই। ৮৮ বছরের পুরোনো সেই বিরোধ নিষ্পত্তি করলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল রানা। তিনি ৯টি শর্তে শিদলাই শান্তি চুক্তিনামা করেন দুই পক্ষ, প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে। এ নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে তাঁর সঙ্গে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল রানা

প্রশ্ন :

৮৮ বছরের পুরোনো বিরোধ কীভাবে মেটালেন?

সোহেল রানা: চলতি বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর এ উপজেলায় যোগদান করি আমি। এরপর অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে আইনশৃঙ্খলা কমিটির প্রথম সভা হয়। এতে কমিটির বেশির ভাগ সদস্য শিদলাইয়ের বড় দল ও ছোট দলের সংঘর্ষ নিয়ে বক্তব্য দেন। বিষয়টি আমাকে ভাবিয়ে তোলে। এরপর এ নিয়ে কাজ শুরু করি। প্রথমে শিদলাই শান্তি পরিষদ নামের একটি কমিটি গঠন করি। ওই কমিটির প্রধান উপদেষ্টা হলেন স্থানীয় সাংসদ আবুল হাসেম খান, উপদেষ্টা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ জাহের ও কমিটির সদস্য উপজেলার আটটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, আমি সভাপতি ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সদস্যসচিব। কমিটির সদস্যরা দুই মাস ধরে শিদলাই গ্রামের বড় দল ও ছোট দলের সঙ্গে পৃথক সভা করেন। তাদের কাউন্সেলিং করেন। এরপর ৪ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে একটি চুক্তিনামা করি। এটি শিদলাই চুক্তিনামা হিসেবে পরিচিত। এরই আলোকে ৯টি শর্তে বিরোধ নিষ্পত্তি করি।

প্রশ্ন :

এতে কি দ্বন্দ্ব নিরসন হবে বলে আপনি মনে করেন?

সোহেল রানা: আমি ভীষণ আশাবাদী মানুষ। দীর্ঘদিনের বিরোধে ছোট দলের সদস্যরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাঁদের অন্তত ৫৫টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মারামারিতে অন্তত ৩০ জনের অঙ্গহানি হয়েছে। চুক্তি মোতাবেক তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। দেড় কোটি টাকা এ বাবদ আসবে। ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের স্বত্বাধিকারীরা ১ কোটি ২০ লাখ টাকা পাবেন। ৩০ লাখ টাকা যাঁদের অঙ্গহানি হয়েছে, তাঁদের দেওয়া হবে। এ জন্য পুনর্বাসন কমিটি হয়েছে। এখানকার বিরোধগুলো সাইক্লিকভাবে হচ্ছে। পাঁচ বছর পরপর হয়। আর যেন কথায় কথায় মারামারি না হয়, সে জন্য শিদলাই আমীর হোসেন ডিগ্রি কলেজে ঢাকা থেকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এনে পালা করে তাঁদের কাউন্সেলিং করা হবে। এলাকায় দুই পক্ষ থেকে ১০ জন করে মোট ২০ জন পুলিশের একজন উপপরিদর্শকের নেতৃত্বে কাজ করবেন। এ কমিটির নাম দেওয়া হয়েছে শান্তির পাহারাদার। চুক্তির পর আমরা এখন পর্যবেক্ষণ ও মনিটরিং করছি।

প্রশ্ন :

গত শনিবারের সম্প্রীতি সমাবেশে কী ধরনের অস্ত্র জমা পড়েছে?

সোহেল রানা: দেশীয় অস্ত্র টেঁটা, বল্লম ও লাঠিসোঁটা। গ্রামের মারামারিতে সাধারণত এ ধরনের অস্ত্রই বেশি ব্যবহার করা হয়। এখানেও তাই ব্যবহার করা হতো বলে স্থানীয় লোকজন দাবি করেছেন। আমরা সেগুলো তালিকা করে জমা রেখেছি।

প্রশ্ন :

দুই পক্ষের মারামারিতে অন্তত ১৮টি মামলা হয়েছে। মামলাগুলোর কী হবে?

সোহেল রানা: যেসব মামলা আদালতে বিচারাধীন, সেগুলো আইনজীবী নিয়োগ করে আদালতের মাধ্যমে দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে। আর যেসব মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি, সেগুলো থানা থেকে নিষ্পত্তি হবে।

প্রশ্ন :

জনশ্রুতি রয়েছে, কোথাও কোথাও গ্রামের যেকোনো ঘটনা নিরসনে জনপ্রতিনিধি ও গ্রাম্য মাতবরেরা আগ্রহী হন না। ঝামেলা লাগিয়ে রাখেন। এখানে কীভাবে করলেন এ কাজ?

সোহেল রানা: স্থানীয় সাংসদ, উপজেলা চেয়ারম্যান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা আমাকে সাহস দিয়েছেন। তাঁরা আমাকে এ কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন। তাঁদের নিয়েই শান্তির শিদলাই করে দিতে চাই। সেই আহ্বানে তাঁরা ও শিদলাই গ্রামবাসী এগিয়ে এসেছেন। তাঁদের সহযোগিতা নিয়ে এ চুক্তি হয়েছে। সাংসদ মহোদয় শপথ বাক্য পাঠ করান। স্ট্যাম্পের মাধ্যমে ৯টি চুক্তি লিপিবদ্ধ করে বড় দল ও ছোট দল থেকে প্রতিনিধি নিয়ে চুক্তিনামা করি। একই সঙ্গে শিদলাই গ্রামে বড় দল ও ছোট দল নামে কোনো পক্ষ থাকবে না বলে অঙ্গীকার করা হয়।