কমিটি নিয়ে দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব

এক পক্ষ যশোর পৌর আওয়ামী লীগের কমিটি প্রকাশ করা করেছে। ঘোষিত ওই কমিটি অবৈধ বলে একটি পক্ষ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।

পৌর ও উপজেলা কমিটি গঠন নিয়ে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের বিরোধ আবারও প্রকাশ্যে এসেছে। সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত ছাড়াই এক পক্ষ যশোর পৌর আওয়ামী লীগের কমিটি পত্রিকার মাধ্যমে প্রকাশ করা করেছে। একই প্রক্রিয়ায় অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগেরও পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যদিকে ঘোষিত ওই কমিটি অবৈধ বলে একটি পক্ষ গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে।

যশোর জেলা আওয়ামী লীগ কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগের নেতৃত্বে যশোর সদর আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ এবং অপর অংশের নেতৃত্বে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের সংসদ সদস্য এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। জেলা কমিটির সভাপতি শহিদুল ইসলাম কাজী নাবিল আহমেদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

যশোর পৌর ও অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটির অনুমোদন দেয়নিজেলা কমিটি। সমাধানের জন্য দুই-একদিনের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভা ডাকা হবে।
শহিদুল ইসলাম, সভাপতি, যশোর জেলা আওয়ামী লীগ

যশোর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আসাদুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান স্বাক্ষরিত পৌর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা গত সোমবার স্থানীয় পত্রিকার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এ কমিটির অধিকাংশ নেতা শাহীন চাকলাদারের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এদিকে মঙ্গলবার শহিদুল ইসলাম এই কমিটি অবৈধ উল্লেখ করে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠান।

মাহমুদ হাসান বলেন, কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা ছিল, চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে উপজেলা ও পৌর শাখার আংশিক সব কমিটির পূর্ণাঙ্গ তালিকা পাঠাতে হবে। সেই অনুযায়ী তালিকা জেলা আওয়ামী লীগ ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দপ্তরে পাঠানো হয়। তালিকা জমা দেওয়ার তিন মাস পর গত ৩০ মে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা হয়। ওই সভায় কমিটি উত্থাপন করা হলেও অনুমোদন দেওয়া হয়নি। এ কারণে জামায়াত-বিএনপির তৎপরতা ঠেকাতে ও সাংগঠনিক কাজের স্বার্থে পত্রিকার মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ করা হয়েছে।

২০১৯ সালের নভেম্বরে কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে পৌর কমিটির সভাপতি আসাদুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক পদে মাহমুদ হাসান নির্বাচিত হন। আড়াই বছর পেরিয়ে গেলেও কমিটির পূর্ণাঙ্গ করা হয়নি। এখন আবার জেলা কমিটি অনুমোদন দিচ্ছে না।

মাহমুদ হাসান বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা তৈরি করার সময়ে কাজী নাবিল আহমেদ ও শহিদুল ইসলাম কারও নামের সুপারিশ দেননি। তাঁদের লোকজন কমিটিতে নেই এমন অভিযোগে কমিটি অনুমোদন করা হয়নি।

এ ছাড়া ২০১৯ সালের নভেম্বরে অভয়নগর উপজেলা কমিটির সভাপতি এনামুল হক ও ওলিয়ার রহমান সরদারকে সাধারণ সম্পাদক করে পাঁচ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। আড়াই বছর পরে পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তরে পাঠানো হয়। গত বুধবার পত্রিকার মাধ্যমে ৭১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির তালিকা পত্রিকার মাধ্যমে ঘোষণা করা হয়।

এ বিষয়ে এনামুল হক বলেন, ‘জেলা কমিটির দপ্তরে অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ তালিকা পাঠানো হয়। কীভাবে ওই তালিকা পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে তা জানি না। তবে অভয়নগর থেকে আমরা প্রকাশ করিনি।’

জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়নি। সাংগঠনিক কাজের স্বার্থে পত্রিকার মাধ্যমে কমিটি প্রকাশ করা হয়েছে।
মাহমুদ হাসান, সাধারণ সম্পাদক, যশোর পৌর আওয়ামী লীগ

এ বিষয়ে শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘গঠনতন্ত্র অনুযায়ী উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের কমিটির অনুমোদন দেয় জেলা কমিটি। কিন্তু যশোর পৌর ও অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটির কোনো অনুমোদন জেলা কমিটি দেয়নি। সমস্যা সমাধানের জন্য দুই-একদিনের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভা ডাকা হবে।’

যশোরে আটটি উপজেলা ও পৌর কমিটির অধিকাংশই আংশিক পদ দিয়ে চলছে।