কমিটি নিয়ে নতুন বিরোধ

  • দীর্ঘ প্রায় এক যুগ পর সম্মেলন করে চাঁদপুর জেলা বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়েছে।

  • ওই কমিটিতে সভাপতি ও সম্পাদক পদ না পাওয়ায় দলের একাংশের নেতা–কর্মীরা পাল্টা কাউন্সিল করেছেন।

চাঁদপুর জেলার মানচিত্র

দীর্ঘ প্রায় এক যুগ পর সম্মেলনের মাধ্যমে চাঁদপুর জেলা বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু ওই কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ না পাওয়ায় দলের একাংশের নেতা–কর্মীরা পাল্টা কাউন্সিল করেছেন। এ নিয়ে দলে নতুন করে গ্রুপিং সৃষ্টি হয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন এ গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির কার্যনিবাহী কমিটির সদস্য মমিনুল হক। গত বুধবার মমিনুল হক এ সম্মেলন বানচাল করতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের অন্য আরও চারজনসহ দলীয় কিছু নেতা–কর্মীকে নিয়ে চাঁদপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। তাঁদের এই গ্রুপিংয়ের কারণে চাঁদপুর শহরে প্রশাসন শেষ পর্যন্ত সম্মেলন করার অনুমতি দেয়নি।

কেন্দ্রীয় বিএনপির কার্যনিবাহী কমিটির সদস্য মমিনুল হক ও তাঁর পক্ষের নেতারা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ পাননি।

সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রবাসীকল্যাণ সম্পাদক ও নবনির্বাচিত সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ ওরফে মানিক দলীয় নেতা–কর্মীর পরামর্শে নানুপুর গ্রামে জেলা বিএনপির সম্মেলনের স্থান নির্ধারণ করেন। সেখানে গত শনিবার কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলরদের ভোটে দলীয় নির্বাচন কমিশন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করেন। কিন্তু একই দিন মমিনুল হক ও তাঁর অপর সহযোগিরা মিলে শাহরাস্তি উপজেলায় পাল্টা কাউন্সিল করেন।

বিষয়টি জানার পর ওই দিন রাতেই মমিনুল হককে কারণ দর্শানোর নোটিশ করেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ওই নোটিশে বলা হয়, ‘আপনি চাঁদপুর জেলা বিএনপির সম্মেলন ও কাউন্সিলে সহযোগিতা না করে তা বানচালের লক্ষ্যে শাহরাস্তি উপজেলায় একই দিন পাল্টা কাউন্সিল করেন। তা ছাড়া দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গত ৩০ মার্চ চাঁদপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে প্রকাশ্যে চাঁদপুর জেলা বিএনপির সম্মেলন ও কাউন্সিল নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন। উল্লিখিত ঘটনাগুলো গুরুতর অসদাচরণ ও সম্পূর্ণভাবে দলীয় শৃঙ্খলার পরিপন্থী। সুতরাং এ ধরনের কার্যকলাপের জন্য কেন আপনার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তার যথাযথ ব্যাখ্যা দিয়ে লিখিত প্রতিবেদন আগামী তিন দিনের মধ্যে দলীয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হলো।’

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘ওয়ান–ইলেভেনের সময় থেকে আমি চাঁদপুরে বিএনপির রাজনীতির হাল ধরেছি। একাধিক মামলার আসামি হয়েছি। একাধিকবার সরকার দলীয় লোকজন আমার বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। এরপরও দলের ঐক্য ধরে রাখতে সমস্ত গ্রুপিং অবসান করে দ্বিতীয়বারের মতো সম্মেলন সফল করে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি করেছি।’

এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মমিনুল হক বলেন,‘আমরা সম্মেলনের বিরুদ্ধে বা দলের কারও বিরুদ্ধে প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করিনি। আমরা এ সম্মেলনের কিছু অনিয়ম ও গঠনতন্ত্রবিরোধী কার্যকলাপ নিয়ে সাংবাদিকদের সহায়তা চেয়েছিলাম। এতে চারটি দাবি তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো বিএনপির গঠনতন্ত্রের বিশেষ বিধান ধারা ১৫–এর খ অনুযায়ী বর্তমান ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পদে থাকা অবস্থায় শেখ ফরিদ আহমেদের প্রার্থীতা অবৈধ ঘোষণা করা, সম্মেলনের স্থান হিসেবে নয়াপল্টনস্থ বিএনপির কার্যালয় অথবা চাঁদপুর জেলার আটটি উপজেলায় আটটি ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃত্বে ৯ সদস্য বিশিস্ট নির্বাচন কমিশন গঠন করা ও ১ হাজার ৫১৫ জন কাউন্সিলরের নিজ নিজ ইউনিটে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করে নিজস্ব মতামত দলের মহাসচিবের নিকট পাঠানো।’

জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মমিনুল হক আরও বলেন, তাঁদের কোনো দাবিই মানা হয়নি। এরপরও শেখ ফরিদ আহমেদকে সভাপতি পদে নির্বাচন করতে দলীয় চেয়ারপারসনের অনুমতি নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল অথবা তাঁকে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় প্রবাসীকল্যাণ সম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছিল। এসব না করে নিজেদের ইচ্ছেমতো সম্মেলন করায় তাঁরা দলের অন্য নেতা–কর্মীর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে হাজীগঞ্জ, শাহরাস্তি ও চাঁদপুরে পৃথক কাউন্সিলরদের মতামত নিয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা করেছেন।