কমিটি নিয়ে সিদ্ধান্ত শিগগির, কাদের মির্জাকে ‘কড়া বার্তা’

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির বিষয়ে শিগগির সিদ্ধান্ত আসছে বলে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের তরফ থেকে জানানো হয়েছে। এদিকে কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভার আলোচিত মেয়র আবদুল কাদের মির্জাকে শান্ত থাকার ‘কঠোর বার্তা’ দেওয়া হয়েছে কেন্দ্র থেকে।

গত সপ্তাহে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে উল্লিখিত বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ওই মনোভাবের কথা জানিয়ে দেন।

দলীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত কমিটি কাটছাঁট করে ত্যাগী নেতাদের নিয়ে নতুন কমিটি তৈরির কাজ করছেন দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তবে নতুন কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে, বিশেষ করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন নিয়ে নানা গুঞ্জন চলছে। আর ওই গুঞ্জনে অনেকটা ঘি ঢেলে দিয়েছেন, যাঁকে নিয়ে আলোচনা সেই সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরী নিজেই। ৩ জুলাই ফেসবুক লাইভে এসে তিনি বললেন, ‘ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। আমি তো ২৫ বছর চালিয়েছি। তিনবার এমপিগিরি করছি। নির্বাচনী এলাকায় মানুষের সেবা করতে আমার কোনো পোস্ট (পদ) লাগে না। আমি আপনাদের পাশে ছিলাম এবং ভবিষ্যতেও থাকব।’

দলের সভাপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নোয়াখালী ফেরার পর এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী কোম্পানীগঞ্জ যান। তিনি আবদুল কাদের মির্জা ও তাঁর প্রতিপক্ষ সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ভাগনে উপজেলা আওয়ামী লীগের মুখপাত্র মাহবুবুর রশিদের (মঞ্জু) সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তিনি দলের শীর্ষ পর্যায়ের বার্তা তাঁদের কাছে পৌঁছে দেন।

এ প্রসঙ্গে এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘নেত্রী আমাকে বলেছেন, “আপনি কাদের মির্জাকে গিয়ে বলে দেন, সে যেন আর বাড়াবাড়ি না করে।” নির্দেশনা অনুযায়ী আমি সাক্ষাৎ করে কাদের মির্জাকে দলীয় প্রধানের বার্তাটি পৌঁছে দিয়েছি। একইভাবে কাদের মির্জার প্রতিপক্ষ ওবাদুল কাদেরের ভাগনে মাহবুবুর রশিদের (মঞ্জু) বাসায় গিয়েও একই বার্তা দিয়েছি। কিন্তু হেতের (কাদের মির্জা) বাড়াবাড়ি তো বন্ধ নাই।’

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পৌরসভা নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা করতে গিয়ে কাদের মির্জা ‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলে দলের এমপিরা দরজা খুঁজে পাবে না’ বলে আলোচনায় আসেন। ওই বক্তৃতায় তিনি জাতীয় নির্বাচন, বৃহত্তর নোয়াখালীতে দলের দুই সাংসদ মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী ও নিজাম উদ্দিন হাজারীর বিরুদ্ধে নিয়োগবাণিজ্য, টেন্ডারবাজিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ তোলেন। দাবি তোলেন জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটি বাতিলেরও। অবশ্য কমিটি বাতিলে কাদের মির্জার দাবির আগেই বিষয়টি নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা হয়।

অভিযোগ ওঠে, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নোয়াখালী-৪ আসনের সাংসদ মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের প্রাধান্য দিয়ে কমিটি তৈরি করেছেন, যাতে যুব ও ক্রীড়া সম্পাদকের পদ দেওয়া হয়েছিল তাঁর ছেলে আতাহার ইসরাক সাবাব চৌধুরীকে। এ ছাড়া ৭৫ সদস্যের প্রস্তাবিত ওই কমিটিতে অনেক বিতর্কিত ব্যক্তির নাম অন্তর্ভুক্তিরও অভিযোগ ওঠে। তীব্র সমালোচনার মুখে পরে দুই দফায় সংশোধন করে বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে নতুন কমিটি কেন্দ্রে দাখিল করা হয়।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদের পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা এখন জেলার সর্বত্র। তবে এ নিয়ে একমাত্র সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জা ছাড়া প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলছেন না। কাদের মির্জা ছয় মাস ধরে বলে আসছেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরীকে সরাতে হবে।

কমিটি থেকে বাদ পড়ার গুঞ্জনের বিষয়ে জানতে চাইলে সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা হলেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী, আর ওবায়দুল কাদের হলেন সাধারণ সম্পাদক। ওনারা যদি মনে করেন নোয়াখালীর কমিটি পরিবর্তন করা দরকার, সে ক্ষেত্রে আমার কি কিছু করার আছে?’ এক প্রশ্নের জবাবে একরামুল করিম চৌধুরী বলেন, ‘আপা সিদ্ধান্ত দিলে অবশ্যই মানব। আমি আপা বা কাদের ভাইয়ের সিদ্ধান্তের বাহিরে না।’

এদিকে আবদুল কাদের মির্জা নিজেও কোম্পানীগঞ্জে টানা দ্বন্দ্ব-সংঘাতের অবসান চান। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, নেত্রীর বার্তা তিনি পেয়েছেন। তিনি শান্ত আছেন।

জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পরিবর্তন ও নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলার পরিপ্রেক্ষিতে কাদের মির্জার সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন দলের স্থানীয় পর্যায়ের অনেক নেতা। গত কয়েক দিনে যাঁরা সাক্ষাৎ করেছেন, তাঁদের মধ্যে নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সহিদ উল্যাহ খান, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শিহাব উদ্দিন, বেগমগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহনাজ বেগম, চৌমুহনী পৌরসভার সাবেক মেয়র আক্তার হোসেন রয়েছেন।

এ বিষয়ে কাদের মির্জা বলেন, ‘তাঁরা হয়তো মনে করছেন, আমি সুপারিশ করলে তাঁরা একটা ভালো অবস্থানে যেতে পারেন।’

জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর। ওই সম্মেলনে এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হন সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরী।