করোনার টিকাদানকেন্দ্রের ভেতরে ভিড়, স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত

করোনার টিকাদান কক্ষের ভেতরে ভিড় করেছেন মানুষ। ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল, ২৯ জুলাই।
ছবি: শাহাদৎ হোসেন

সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি। কখনো হালকা আবার কখনো মুষলধারে বৃষ্টি। কিন্তু করোনার টিকা ও নমুনা পরীক্ষার জন্য মানুষের যাওয়া থেমে নেই। বৃষ্টির কারণে করোনার টিকাদানকেন্দ্রের বাইরে জমেছে পানি। ময়লা পানির ওপর দিয়ে হেঁটে গিয়ে দুর্ভোগ নিয়েই মানুষ করোনার টিকা নিয়েছেন ও নমুনা দিয়েছেন।

এটি বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বেলা একটা পর্যন্ত ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের চিত্র। মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা কর্মচারীদের কাউকেই পানি অপসারণ করতে বা মানুষের চলাচল সহজ করতে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। টিকাদানকেন্দ্রের ভেতরে ছিল মানুষের ভিড়। ছিল না কোনো শৃঙ্খলা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, কয়েক দিন ধরেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে করোনার নমুনা পরীক্ষার জন্য ভিড় বেড়েছে। হঠাৎ নমুনা পরীক্ষায় আগ্রহী হয়ে ওঠেন সাধারণ মানুষ। একইভাবে করোনার টিকার ক্ষেত্রেও মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রথম দিকে ভিড় সামাল দিতে ব্যর্থ হয়। গত সোমবার থেকে নমুনার সারি নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগী হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু করোনার টিকাদানের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের শৃঙ্খলা দেখা যায়নি। আর জেলায় কয়েক দিন ধরেই সূর্য ওঠার আগেই মানুষ নমুনার সারিতে দাঁড়ানো শুরু করেছেন।

২৫ জুলাই হাসপাতালে করোনার অ্যান্টিজেন পরীক্ষার জন্য নমুনা দেওয়া ২০৮ জনের মধ্যে ৬৪ জন, ২৬ জুলাই ১৬৪ জনের মধ্যে ৭২ জন, গত মঙ্গলবার ১৭৭ জনের মধ্যে ৫৭ জন, বুধবার ১৯৭ জনের মধ্যে ৮৬ জন এবং সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ১৬৮ জনের মধ্যে ৬১ জনের অ্যান্টিজেনের ফলাফল পজিটিভ আসে।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে একটা পর্যন্ত সরেজমিন অবস্থান করে দেখা গেছে, হাসপাতাল চত্বরের দক্ষিণ দিকে বিএমএ ভবনে করোনা পরীক্ষা জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়। আর বিএমএ ভবনসংলগ্ন একটি নতুন কক্ষে করোনার টিকা প্রদান করা হচ্ছে। আগে করোনার টিকা হাসপাতাল চত্বরের ব্রাহ্মণবাড়িয়া নার্সিং ইনস্টিটিউটে দেওয়া হতো। দুই থেকে তিন দিন ধরে নতুন নির্মাণ করা কক্ষে করোনার টিকা প্রদান করা হচ্ছে। সকাল থেকে বৃষ্টির কারণে ওই কক্ষের বাইরে পানি জমেছে। করোনার টিকা নিতে আসা বৃদ্ধ-বৃদ্ধাসহ বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ পানির ওপর দিয়ে হেঁটে করোনার টিকাদানকেন্দ্রে গেছেন। কেউ কেউ করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিতে আসা বিএমএ ভবনের দেয়ালের সঙ্গে গা ঘেঁষে আস্তে আস্তে হেঁটে টিকাদানকেন্দ্রে গেছেন।

টিকাদানকেন্দ্রের ভেতরে পাঁচটি টেবিল রয়েছে। দুটি টেবিলে স্বাস্থ্যকর্মী ও রেড ক্রিসেন্টে সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবক এবং বাকি পাশাপাশি থাকা তিনটি টেবিলে সিনিয়র স্টাফ নার্সরা মানুষকে করোনার টিকা দিচ্ছেন। এখানে নারী ও পুরুষের জন্য পৃথক কোনো স্থান দেখা যায়নি। পাশাপাশি বসিয়েই নারী-পুরুষকে টিকা দেওয়া হচ্ছে। এতে অনেক নারী বিড়ম্বনায় পড়েন।

আইনজীবী আবদুর রহমান ও ব্যবসায়ী দুলাল হাওলাদার দুজনই তাঁদের বৃদ্ধ মাকে টিকা দেওয়ার জন্য হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন। তাঁরা প্রথম আলোকে বলেন, টিকাদানকেন্দ্রে মানুষের ভিড়। এতে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বৃদ্ধ আমেনা খাতুন বলেন, টিকাদানকেন্দ্রের সামনে থাকা বৃষ্টির ময়লা পানির ওপর দিয়ে হেঁটে ভেতরে যেতে হয়েছে। অন্তত কয়েকটি ইট বিছিয়ে দিলে মানুষ স্বচ্ছন্দে হাঁটতে পারত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুজন বলেন, পানির ওপর কয়েকটি ইট রাখতে বললে হাসপাতালের কর্মচারী উল্টো বলেছেন, এটি হাসপাতালের নয়, গণপূর্তের কাজ।
জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ ওয়াহীদুজ্জামান বলেন, গুরুত্বসহকারে বিষয়টি দেখছি। ইট রাখা নিয়ে হাসপাতালের কর্মচারীদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এমনটি বলে থাকলে ঠিক বলেনি। টিকাকেন্দ্রে ভিড় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আসলে মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে।