করোনা জয় করে বাড়ি ফিরলেন যমজ সন্তানের মা

সুফি মিয়া ও রিনা বেগমের কোলে তাঁদের যমজ সন্তান।
প্রথম আলো

যমজ সন্তান জন্মের পর ১০ দিনের মাথায় মা করোনায় আক্রান্ত হন। অবস্থা খারাপ হতে থাকে। ভর্তি করতে হয় হাসপাতালে। এদিকে মাকে না পেয়ে দুধের জন্য কাঁদছিল সন্তান দুটি। সেই দুঃসময় পার হয়ে গেছে এখন। অবশেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন মা। আর মায়ের কোলে ফিরেছে তাঁর দুই সন্তান। এ ঘটনা সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার।

গত ১৫ আগস্ট উপজেলার সৈয়দপুর গোয়ালগাঁও গ্রামের নির্মাণশ্রমিক সুফি মিয়া ও গৃহিণী সৈয়দা রিনা বেগমের ঘর আলো করে আসে যমজ ছেলে। সিলেটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে রিনা যমজ ছেলের জন্ম দেন। এ আনন্দের মধ্যে রিনার করোনার উপসর্গ দেখা দেয়। ২৪ আগস্ট নমুনা পরীক্ষায় তাঁর করোনা শনাক্ত হয়।

প্রথমে নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হলেও শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ২৫ আগস্ট রাতে রিনাকে সিলেটের একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অসুস্থ স্ত্রী ও দুই শিশু নিয়ে সুফি মিয়া পড়েন বিপদে। স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য তাঁর হাতে ছিল না টাকা। অন্যদিকে মাকে না পেয়ে দুই শিশু কেঁদে অস্থির। এ নিয়ে প্রথম আলো অনলাইনে ২৬ আগস্ট ‘যমজ দুই সন্তান দুধের জন্য কাঁদছে, আইসিইউতে করোনায় আক্রান্ত মা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

সংবাদ প্রকাশের পর ওই মায়ের চিকিৎসা ও যমজ দুই সন্তানের দুধের খরচ দেওয়ার জন্য অনেকেই সুফি মিয়ার পাশে দাঁড়ান। সৈয়দপুর গ্রামের কিছু তরুণ টাকা সংগ্রহ ও ব্যয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হোয়াটসঅ্যাপে একটি গ্রুপ চালু করেন। ইতিমধ্যে প্রবাসীসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ সাড়ে চার লাখ টাকা দিয়েছেন। অবশেষে ১৫ দিন চিকিৎসা শেষে বৃহস্পতিবার রাতে বাড়িতে ফেরেন তিনি।

রিনা বেগম শুক্রবার বলেন, এলাকার মানুষের দোয়া ও ভালোবাসায় নতুন জীবন ফিরে পেয়েছেন। সন্তানদের কাছে ফিরতে পেরে তিনি খুব খুশি।

সুফি মিয়া বলেন, স্ত্রীর চিকিৎসা ও সন্তানের দুধের জন্য বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ আর্থিক সহায়তা দেওয়ায় তিনি সবার কাছে কৃতজ্ঞ। বিশেষ করে প্রথম আলোর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। প্রথম আলোয় সংবাদ প্রকাশের পর এই দুঃসময়ে সবাই তাঁর পাশে দাঁড়ান।

জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সায়েকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, অস্ত্রোপচারের পরপরই করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় ওই মায়ের শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। তিনি সুস্থ হয়ে সন্তানের কাছে ফিরে এসেছেন, সংবাদটি খুবই আনন্দের।