কর্তন নয়, এবার যত্ন করে তালগাছ স্থানান্তর

এবার আর তালগাছ কর্তন করে সিলেট সিটি করপোরেশনের সৌন্দর্যবর্ধন নয়, বরং যত্ন করে স্থানান্তর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।তালগাছের জায়গায় সড়ক বিভাজকের কাঠামো অনুযায়ী রোপণ করা হয়েছে বিদেশি সুপারিগাছ ও বিভিন্ন জাতের ফুলগাছ।
ছবি: আনিস মাহমুদ

সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের একটি অংশ নগরীর মধ্যভাগে এসে থেমেছে। ২০১২ সালের দিকে এ সড়কে যখন সড়ক বিভাজক নির্মাণ করা হয়েছিল, তখন অনেকটা উন্মুক্ত ছিল স্থানটি। তখন স্থানীয় বাসিন্দা প্রয়াত আবদুল বাতেন সেখানে যত্ন করে ২২টি তালগাছ লাগিয়েছিলেন। তবে ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে সিলেট সিটি করপোরেশনের সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কয়েকটি বাড়ন্ত তালগাছ নির্বিচার কেটে ফেলা হয়েছিল। এ অবস্থায় এলাকাবাসী ও পরিবেশবাদী সংগঠনের চাপে তালগাছ কর্তন বন্ধ করা হয়েছিল।

প্রায় দুই বছর পর আবার সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শুরু করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন। তবে এবার আর সেই তালগাছগুলো কর্তন নয়, বরং যত্ন করে স্থানান্তর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রোববার দিনভর সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর উপস্থিতিতে এ কাজ শুরু হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়ক বিভাজকের যে অংশে তালগাছ ছিল, সেগুলো স্থানান্তরের জন্য জায়গা নির্ধারণ করে গাছগুলো ওপড়ানো হয়েছে। আর তালগাছের জায়গায় সড়ক বিভাজকের কাঠামো অনুযায়ী রোপণ করা হয়েছে বিদেশি সুপারিগাছ ও বিভিন্ন জাতের ফুলগাছ।

সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের শেষ অংশ পড়েছে নগরীর আম্বরখানা মোড়ে। সেখান থেকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটারে সড়ক বিভাজক আছে। এ সড়ক বিভাজক গাছ রোপণের আওতায় আনা হয়েছে। চলতি বর্ষাকালেই এ কাজ করা হবে বলে সিটি করপোরেশনের প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

সড়ক বিভাজকের যে অংশে তালগাছ রোপণ করা হয়েছিল, সেটি নগরীর পাঠানটুলা এলাকায় পড়েছে। তালগাছ স্থানান্তরিত করার কাজটি করছেন সিটি করপোরেশনে নিযুক্ত মালিরা। তালগাছ ওপড়ানো অবস্থায় একটি স্থানে হেলে রেখে সাত দিন পর ফাঁকা জায়গা দেখে রোপণ করার কথা জানিয়েছেন মালিরা। এখন সেখানে সড়ক বিভাজক উপযোগী থাই-সুপারিগাছ ছাড়াও রঙ্গন, রাধাচূড়াসহ বিভিন্ন বনজ গাছ রোপণ করার কাজ চলছে।

মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের প্রায় চার কিলোমিটার সড়ক বিভাজকে এ কাজ সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের মাধ্যমে করা হচ্ছে। এটি একটি চলমান প্রকল্প। দুই বছর আগে তালগাছ কর্তন নিয়ে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, সে রকম কোনো পরিস্থিতি এবারও যাতে না ঘটে, এ জন্য আমি উপস্থিত থেকে এ কাজটি করছি।’ তালগাছ স্থানান্তর নিয়ে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের সঙ্গে পরামর্শ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেয়র।

তিনি বলেন, তালগাছ বজ্রপাত নিরোধে একটি উপকারী গাছ। নগরীর যে এলাকা ফাঁকা পাওয়া যাবে, সেখানেই এ তালগাছ রোপণ করা হবে। পাঠানটুলার এ সড়ক বিভাজক থেকে তালগাছ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী সাত দিন উপুড় করে রেখে তারপর রোপণ করা হবে।

স্থানীয় লোকজন জানান, ২০১২ সালে সড়ক বিভাজক নির্মাণের পর প্রয়াত আবদুল বাতেন ২২টি তালগাছ রোপণ করেছিলেন। তাঁর নাতি আবুল হাসান জানান, তালগাছ বজ্রপাত নিরোধে সহায়তা করে বলে এ গাছগুলো রোপণ করেছিলেন আবদুল বাতেন। তালগাছের পাশাপাশি ৪৮টি ঔষধিগাছও রোপণ করেছিলেন তিনি। তবে সড়কের সৌন্দর্যবর্ধনের সময় আবদুল বাতেনের লাগানো তালগাছগুলো নির্বিচার কাটায় এলাকাবাসী ও পরিবেশবাদীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন।

সে সময় বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠন ‘ভূমিসন্তান বাংলাদেশ’ এলাকাবাসীকে নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানালে ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর প্রথম আলোয় ‘যত্ন করে লাগানো তালগাছ নির্বিচারে কর্তন’ শিরোনামে একটি সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল। ওই দিনই সিটি মেয়র ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অবশিষ্ট কিছু তালগাছের গোড়া সংরক্ষণ করে নির্বিচার গাছ কাটার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন।

সে সময় কর্তন থেকে রক্ষা পাওয়া তালগাছগুলো এখন ৩ থেকে ৪ ফুট উঁচু হয়েছে বলে জানিয়েছেন সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তাঁরা বলেছেন, পাঠানটুলার সড়ক বিভাজক অংশটির পরিসর খানিকটা বড়। চারপাশে ফাঁকা জায়গা থাকায় একসময় হয়তো সেখানে তালগাছ লাগানোর মতো অবস্থা ছিল। কিন্তু সড়ক বড় করায় এখন সেখানে কোনো উঁচু গাছ লাগানো যান চলাচলের জন্য নিরাপদ নয়। এ জন্য তালগাছের বদলে সড়ক বিভাজক উপযোগী সৌন্দর্যবর্ধনের গাছ রোপণের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তালগাছ কাটায় প্রকল্প কাজ সাময়িক স্থগিত রাখা হয়েছিল। এবার এ বর্ষাকালে সড়ক বিভাজকে সৌন্দর্যবর্ধনমূলক গাছ রোপণ করতেই প্রকল্প কাজ আবার শুরু করা হয়েছে।

বাপার সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিবাদের মুখে ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর মেয়র পাঠানটুলায় গিয়ে তালগাছের গোড়া সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। পরে সেই গোড়া থেকে তালগাছের বাড়ন্ত অবস্থা আমাদের দেখার মধ্যে ছিল। কর্তনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া তালগাছ যথাস্থানে রোপণ করে পরিচর্যা করে বড় করা হলে তবেই এ চেষ্টা সফল হবে।’