কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিকদের তালিকা তৈরিতে অনিয়মের অভিযোগ

উপজেলা পরিষদ ভবনের সামনে বিক্ষোভ করছেন প্রকল্পের তালিকা থেকে বাদ পড়া নারী শ্রমিকেরা
ছবি: প্রথম আলো

বগুড়ার শেরপুরে ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিকদের তালিকা তৈরিতে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ মঙ্গলবার এ বিষয়ে ওই প্রকল্প থেকে বাদ পড়া কুসুম্বি ইউনিয়নের ৭ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ১৩ নারী ও পুরুষ শ্রমিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

মঙ্গলবার বেলা তিনটার দিকে ওই শ্রমিকদের ‘কাজ চাই, পরিবার নিয়ে বাঁচতে চাই, আমাদের কাজ ফিরিয়ে দাও’ স্লোগান দিতে দেখা যায়। পরে তাঁরা প্রকল্পের তালিকা প্রস্তুতের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদ জানান এবং ইউএনওর কাছে এ ঘটনার বিচারের দাবি করেন।

প্রতিবাদে অংশ নেওয়া শ্রমিকেরা বলেন, প্রকল্পের আগের তালিকা থেকে যোগ্য শ্রমিকদের বাদ দিয়ে নতুন তালিকা করা হয়েছে। নতুন তালিকায় নাম ওঠাতে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) দুজন সদস্য ও সচিব তাঁদের কাছ থেকে তিন হাজার টাকা করে চেয়েছিলেন। এই টাকা দিতে না পারায় তাঁদের অনেককেই কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিকদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

যাঁদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তোলা হয়েছে, তাঁরা হলেন কুসুম্বি ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য সিরাজুল ইসলাম, ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আবদুর রাজ্জাক ও ইউপি সচিব নজরুল ইসলাম।

তবে কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিকদের তালিকা তৈরিতে অনিয়ম করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউপি সচিব নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে চলতি অর্থবছরের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এতে পুরোনো শ্রমিকের পাশাপাশি নতুন শ্রমিকের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় (পিআইও) সূত্রে জানা যায়, এই প্রকল্পের আওতায় চলতি অর্থবছরে কুসুম্বি ইউনিয়নে নিয়োজিত শ্রমিকের সংখ্যা ১২৭। গত ২২ জানুয়ারি থেকে প্রকল্পের ৪০ দিনের কাজ শুরু হয়েছে।

ইউএনওর কার্যালয়ে অভিযোগ দিতে আসা শ্রমিক আবদুর রশিদ বলেন, তাঁদের ওয়ার্ডের নতুন ইউপি সদস্য তালিকায় নাম দিতে পুরোনো শ্রমিকদের কাছ থেকে তিন হাজার টাকা করে চেয়েছেন। তহমিনা নামের অপর এক শ্রমিক বলেন, আগের তালিকায় তাঁর নাম ছিল। তিনি এই কাজে এখনো সক্ষম। ইউপি সদস্যের চাহিদামতো টাকা দিতে না পারায় নতুন তালিকায় তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। যাঁদের যোগসাজশে প্রকল্পের কাজ থেকে তাঁরা বঞ্চিত হয়েছেন, তাঁদের বিচার চাইতে ইউএনওর কার্যালয়ে এসেছেন বলে জানিয়েছেন আরজিনা নামের এক শ্রমিক।

এ বিষয়ে আজ বিকেলে মুঠোফোনে ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পের আগের তালিকায় থাকা শ্রমিকদের বাইরেও আরও অনেক দরিদ্র শ্রমিক রয়েছেন। এ জন্য নতুন তালিকায় আরও শ্রমিকের নাম যুক্ত করা হয়েছে। এ সময় তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।

এ প্রকল্প তদারকি করেন উপজেলার পিআইও অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী মাসরুবা আলম। তিনি বলেন, কুসুম্বি ইউনিয়নে গত অর্থবছরে এ প্রকল্পের আওতায় তালিকাভুক্ত শ্রমিক ছিলেন ২৩৪ জন। এ বছরের তালিকায় আছেন ১২৭ জন।

তিনি আরও বলেন, আগের তালিকা থেকেই চলতি অর্থবছরে শ্রমিক নিয়োগ করার কথা। নতুন করে তালিকা প্রস্তুতের কোনো সরকারি নির্দেশনা তাঁদের কাছে নেই। বেশি বয়সের কারণে, কাজে অক্ষম হলে ও কেউ মারা গেলে তবেই তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যাবে।

কুসুম্বি ইউনিয়নে তালিকায় নতুন নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, ওই ইউপি থেকে যে তালিকা তাঁদের দপ্তরে পাঠানো হয়েছে, সময়ের স্বল্পতার কারণে তা যাচাই-বাছাই করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে নতুন কারও নাম সংযুক্ত হয়েছে কি না, তা তিনি জানেন না।

এ প্রসঙ্গে ইউএনও ময়নুল ইসলাম বলেন, ওই প্রকল্পে কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন।