কলমাকান্দায় নৌকায় মিলল ১২৮ বস্তা সরকারি চাল, আটক ২

চাল জব্দের ঘটনার পর ইউপি চেয়ারম্যান ওবায়দুল হকের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয়রা। আজ শুক্রবার দুপুরে খারনৈ ইউনিয়নে
ছবি: প্রথম আলো

নেত্রকোনার কলমাকান্দায় ১২৮ বস্তা ভিজিএফের চাল জব্দ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে খারনৈ ইউনিয়নের মেদিরকান্দা সেতুসংলগ্ন এলাকায় ইঞ্জিনচালিত একটি নৌকা থেকে বস্তাগুলো জব্দ করা হয়।

এ সময় নৌকায় থেকে নৌকার মাঝি জজ মিয়া ও আরমান (২১) নামের এক তরুণকে আটক করেছে পুলিশ। জজ মিয়া খারনৈয়ের গজারমারি এলাকার দুদু মিয়ার ছেলে ও আরমান একই এলাকার দুলাল মিয়ার ছেলে। আটক আরমানের ভাষ্য, চালের বস্তাগুলো খারনৈ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ওবায়দুল হকের তাঁকে এক ব্যবসায়ীর দোকানে নিয়ে যেতে বলেছেন।

এদিকে এ ঘটনার পর আজ শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ইউপি চেয়ারম্যান ওবায়দুল হকের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয়রা। এ সময় তাঁরা ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ‘চাল চুরির’ অভিযোগ তুলে তাঁকে প্রত্যাহারের দাবি জানান।

স্থানীয় বাসিন্দা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঈদুল আজহা উপলক্ষে বন্যার্ত ও হতদরিদ্রদের জন্য খারনৈ ইউনিয়নে ৩৯ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। কয় দিন ধরে ইউনিয়ন পরিষদে জনপ্রতি ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হচ্ছে।

তবে স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, পরিষদের চেয়ারম্যান ওবায়দুল হক ১০ কেজি চাল না দিয়ে ৭ থেকে ৮ কেজি করে চাল দিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি কালোবাজারিতে বিক্রির উদ্দেশে ৩০০ বস্তা চাল গতকাল রাতে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে পাচার করছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। গতকাল রাতে ইউনিয়নের মেদিরকান্দা সেতুসংলগ্ন এলাকায় স্থানীয় লোকজন একটি নৌকা আটক করে হট্টগোল শুরু করেন। এ সময় নৌকার মাঝি গজারমারি এলাকার জজ মিয়ার সঙ্গে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

খবর পেয়ে রাত পৌনে ১২টার দিকে কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল হাসেম পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে ১২৮ বস্তা চাল জব্দ করেন। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, বাকি চালগুলো নৌকা থেকে পানিতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। পরে পুলিশ নৌকায় থাকা আরমানকে আটক করে এবং মাঝি জজ মিয়াকে আহত অবস্থায় আটক করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায়।

আটক হওয়া আরমানের ভাষ্য, চালের বস্তাগুলো ইউপি চেয়ারম্যান ওবায়দুল হকের তাঁকে এক ব্যবসায়ীর দোকানে নিয়ে যেতে বলেছেন।

তবে এ ব্যপারে জানতে ওবায়দুল হকের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

ওই ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাগ কর্মকর্তা ও উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘গতকাল সারাদিন চাল বিতরণের পর সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে আমি অসুস্থ বোধ করায় বাসায় চলে যাই। ২ ট্যাগে ২৮ বস্তা ও ২ বস্তা খোলা অবস্থায় ছিল দেখে এসেছি। আমি আসার পর পুলিশের উপস্থিতিতে চেয়ারম্যান চাল বিতরণ করে থাকতে পারেন। তবে মাস্টাররোলে আমি স্বাক্ষর করিনি।’

ইউএনও মো. আবুল হাসেম বলেন, ভিজিএফের ১২৮ বস্তা চাল জব্দ করা হয়েছে। প্রতি বস্তায় ৩০ কেজি করে চাল রয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যানকে ঘটনার পর থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁর মুঠোফোনও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. লতিফুর রহমান বাদী হয়ে চেয়ারম্যানসহ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।