কাজীপুরে সালিসে ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপার চেষ্টার অভিযোগ

ধর্ষণ
প্রতীকী ছবি

সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে চার সন্তানের জননী এক নারীকে (৪৩) ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়নের একটি গ্রামে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপর ভুক্তভোগী নারী অভিযুক্ত ব্যক্তির বাড়িতে বিচারের জন্য ধরনা দেন। পরে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা রাতেই গ্রাম্য সালিসের মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও জুতাপেটা করার সিদ্ধান্ত দেন। এভাবে ধর্ষণের ঘটনাটির আইনি প্রতিকারের পথে না গিয়ে ধামাচাপার চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম রমজান শেখ। তিনি উপজেলার নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়নের রেহাইশুড়িবেড় গ্রামের বাসিন্দা। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রমজানের ঘরে দুজন স্ত্রী থাকার পরও তিনি নানা সময় ওই নারীকে কুপ্রস্তাব দিতেন। এতে রাজি না হওয়ায় তাঁকে হুমকি-ধমকি দেন রমজান। গতকাল সন্ধ্যায় বাড়িতে লোকজন না থাকায় সুযোগ বুঝে ওই নারীকে ধর্ষণ করে চলে যান রমজান।

ভুক্তভোগী ওই নারী কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কিছুদিন আগে মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। এখন ওই রমজান আমাকে কুপ্রস্তাব দিয়ে বলে, তার কুকথায় রাজি না হলে আমার মেয়ের ক্ষতি করবে। আমি এরপরও তার কুপ্রস্তাবে রাজি না হলে জোরপূর্বক সে আমাকে ধর্ষণ করে। তাই বাধ্য হয়ে আমি ঘটনার বিচারের দাবি নিয়ে রমজানের বাড়িতে গিয়ে অবস্থান নিয়েছিলাম। কিন্তু আমি সে উপযুক্ত বিচার পাইনি।’

অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে মুঠোফোনে ফোন করা হলে রমজান শেখ প্রথমে এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। পরে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমার বিষয়ে হালকা কিছু বিচার হয়েছে শুনেছি। আমি বাড়িতেই ছিলাম না।’ বলেই ফোনটি কেটে দেন।

ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা রাতেই গ্রাম্য সালিসের মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও জুতাপেটা করার সিদ্ধান্ত দেন।

সালিসকারীদের একজন স্থানীয় নাটুয়ারপাড়া গ্রামের সাবেক পুলিশ সদস্য কবির মিয়া বলেন, ‘ওই নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে উভয় দিক বিবেচনা করে নাটুয়ারপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান এবং নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রহিম সরকারসহ আমরা কয়েকজন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জরিমানা ও কিছু হালকা শাসন করে বিষয়টি মিটিয়ে দিয়েছি।’

নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, ‘আমাদের কাছে ঝগড়াঝাঁটি ও গায়ে হাত দেওয়ার অভিযোগ এসেছে। বিচার চেয়েছে ওই নারী ও তার পরিবার। তাই স্থানীয়ভাবে সবাই বসে সামাজিক বিচারের মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসা করে দেওয়া হয়েছে।’

নাটুয়ারপাড়া ইউপির চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শুনেছি দুই পক্ষের ঝগড়া হয়েছে। তাই আমরা শান্তির জন্যই সামাজিকভাবে বসে বিষয়টি মিটিয়ে দিয়েছি।’

নাটুয়ারপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক গৌতম চন্দ্র মালী জানান, ঘটনাটি পুলিশ ফাঁড়ির পাশে ঘটলেও এই বিষয়টির ব্যাপারে তিনি অবগত নন।