কাজে আসছে না ৫ কোটি টাকার সেতু

সংযোগ সড়ক না থাকায় সেতুটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। লালমনিরহাট সদর উপজেলা মোগলহাট ইউনিয়নের দুরাকুটি গ্রামে সম্প্রতিছবি: প্রথম আলো

কয়েক দফা মেয়াদ বাড়ানোর পর ছয় মাস আগে লালমনিরহাট সদর উপজেলায় দুরাকুটি গ্রামে রত্নাই নদীর ওপর সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু দুই পাশের সংযোগ সড়ক এখনো নির্মাণ করা হয়নি। জমি নিয়ে জটিলতা থাকায় সংযোগ সড়ক নির্মাণ নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। ফলে পাঁচ কোটি টাকার সেতুটি এলাকার মানুষের কাজে আসছে না।

উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের ৭ গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ এ পথ দিয়ে চলাচল করে। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, দুরাকুটি গ্রামে ধান খেতের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে সংযোগ সড়কবিহীন সেতুটি।

স্থানীয় লোকজন বলেন, এখন শুকনা মৌসুম থাকায় তাঁরা হেঁটে চলাচল করতে পারছেন। কিন্তু বর্ষাকালে সেতুর নিচে পানি জমে। রত্নাই সেতুর পশ্চিম দিকে দুরাকুটি, কর্ণপুর ও ফুলগাছ গ্রাম আর পূর্ব দিকে রয়েছে মেঘারাম, ইটাপোতা, বুমকা ও খারুয়া গ্রাম। সেতুর দুই পাশেই হাটবাজার ও স্কুল-কলেজ থাকায় এ সাতগ্রামের লোকজনকে এ পথে চলাচল করতে হয়। এ সাতটি গ্রাম ছাড়াও আদিতমারী উপজেলার সাপ্টিবাড়ি, ভেলাবাড়ি ও দূর্গাপুর ইউনিয়নের মানুষও এ পথ দিয়ে যাতায়াত করেন। বর্ষাকালে এসব এলাকার লোকজন বিকল্প পথে ছয়-সাত কিলোমিটার পথ ঘুরে উপজেলা সদরে যান। নতুবা নৌকা দিয়ে চলাচল করতে হয়।

দুরাকুটি গ্রামের কৃষক আয়নাল হক (৬৮) বলেন, ‘চোখের সামনে পাকা ব্রিজ, কয়েক কোটি টাকা খরচ। অথচ ব্রিজের ওপর উঠার উপায় নাই, কয়েক মাইল ঘুইরা ইউনিয়ন পরিষদে যাই দরকার হইলে। এটা কি মাইনা নেওয়া যায়?’

স্থানীয় লোকজন বলেন, সেতুর পূর্ব ও পশ্চিম দিকের সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য প্রায় ৩০-৩২ শতক জমি লাগবে। সেতুর দুই পাশের এ জমি ব্যক্তিগত মালিকানার। এ জমির দাম নিয়ে প্রশাসন ও জমির মালিকদের মধ্যে মতবিরোধ হয়েছে। ফলে সেতু নির্মাণ হয়ে গেলেও সংযোগ সড়ক হচ্ছে না।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, রত্নাই নদীর ওপর ১২০ মিটার দীর্ঘ ও ৮ মিটার চওড়া এ সেতু নির্মাণের কাজ পান কুড়িগ্রাম কলেজ রোডের মেসার্স সুরমা অ্যান্ড আবু বক্কর জেভি নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে ব্যয় ধরা হয় ৫ কোটি ২৪ লাখ ৩২ হাজার টাকা। এক বছর মেয়াদি এ কাজ শুরুর তারিখ ছিল ২০১৬ সালের ২৫ অক্টোবর। কিন্তু নানা কারণে রত্নাই সেতুর নির্মাণকাজ ঠিক সময়ে শুরু হয়নি। এ সেতুর কাজ শেষ হয় ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে। এখনো দুই দিকের সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়নি।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মনজুর কাদের ইসলাম বলেন, সেতুর দুই দিকে মোট ১১৫ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে হবে। এ জন্য প্রায় ৩৪ লাখ টাকা ব্যয় হবে। সংযোগ সড়কের জন্য জমি কেনা নিয়ে কিছু সমস্যা আছে। এর সমাধানের চেষ্টা করছেন তাঁরা।

মোগলহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান বলেন, রত্নাই সেতুর কাজ নিয়ে শুরু থেকেই বিভিন্ন ধরনের সমস্যা ছিল। ঠিকাদার কাজ শুরু করতে বিলম্ব করেন, কখনো বিভিন্ন অজুহাতে কাজ বন্ধ ছিল। এখন সংযোগ সড়কের জমি নিয়ে সমস্যা। সামনে বর্ষা। দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হলে জনগণের চলাচলের দুর্ভোগ কমবে।