কাজ ঝুলে আছে ১৭ বছর, প্রকল্প ব্যয় বেড়েছে ১৫ গুণ

বগুড়া জেলার মানচিত্র

প্রায় দেড় যুগেও শেষ হয়নি বগুড়া শহর থেকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ। ২০০৪ সালে সাড়ে ৪ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩ কোটি ৭০ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। সেখানে ১৭ বছরের ব্যবধানে প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২০৮ কোটি টাকা। প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ১৫ গুণ।

প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথা থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাতায়াতে ভোগান্তি কমাতে ২০০৪ সালে বগুড়া রেলস্টেশন থেকে মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল হয়ে মেডিকেল কলেজ পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৬০ ফুট প্রস্থবিশিষ্ট সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে ১৩ কোটি ৭০ লাখ ৬৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০০৫ সালে প্রকল্পটি অনুমোদনের পর দরপত্র আহ্বান এবং ৮১০ মিটার সড়কে অধিগ্রহণ ও মাটি কাটার কাজ শেষ হয়। সরকারের পালাবদলে প্রকল্পটি ঝুলে যায়। পরে ২০১১ সালে প্রকল্প সংশোধন করে স্টেশনের বদলে মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল থেকে মেডিকেল কলেজ পর্যন্ত ৩৫ ফুট চওড়ার ২ দশমিক ৬৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণের প্রকল্প প্রস্তাব দেওয়া হয়। ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বগুড়ার জনসভা থেকে এই সড়ক নির্মাণের ঘোষণা দিলে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রকল্প বাস্তবায়নে সওজ অধিগ্রহণ ও নির্মাণ বাবদ ৭২ কোটি ৫১ লাখ টাকা বরাদ্দ চায়। কিছু অর্থ ছাড় করা হলে ২০০৪ সালে অধিগ্রহণ করা ৮১০ মিটার অংশের নির্মাণকাজ শেষ হয়। পরে আবারও প্রকল্পটি ঝুলে যায়।

২০০৪ সালে সাড়ে চার কিলোমিটার সড়কের ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ কোটি ৫ লাখ টাকা। প্রতি কিলোমিটারে অধিগ্রহণ ব্যয় ছিল ৬৭ লাখ টাকা। ১৭ বছরের ব্যবধানে ২ দশমিক ৬৬ কিলোমিটার সড়কেই অধিগ্রহণ ব্যয় গুনতে হচ্ছে ১৫৭ কোটি টাকা। প্রতি কিলোমিটারে অধিগ্রহণ ব্যয় ৬৯ কোটি টাকা। অধিগ্রহণ ব্যয় বেড়েছে ৫১ গুণ।

জানা গেছে, প্রকল্পটি দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার মাশুল গুনতে হচ্ছে সরকারকে। জমির দাম হু হু করে বেড়ে যাওয়া ছাড়াও ২০১৭ সালে আইন সংশোধন করে জমির দাম তিন গুণ করায় জমি অধিগ্রহণের খরচ বেড়েছে।

সওজ সূত্রে জানা গেছে, ৮১০ মিটার সড়কের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। অবশিষ্ট ১ দশমিক ৮৫ কিলোমিটারের নির্মাণ ব্যয় ১৮ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের ২৩ মার্চ একনেক প্রকল্পটি আরেক দফা অনুমোদন দেয়। ঠিকাদার নিয়োগের পর কার্যাদেশের মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ এখনো শেষ হয়নি। ১ দশমিক ২ কিলোমিটারের অধিগ্রহণে ব্যয় হয়েছে ৫৭ কোটি টাকা। অবশিষ্ট ৬৫০ মিটার অংশের জমি অধিগ্রহণের জন্য আরও ১১৩ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব একনেকে অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছে সওজ। এ পর্যায়ে প্রকল্প ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১৮৮ কোটি টাকা। এর আগে ৮১০ মিটার সড়ক নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় আরও ২০ কোটি টাকা।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, প্রকল্পে যেটুকু অর্থছাড় হয়েছিল, তা দিয়ে ১ দশমিক ২ কিলোমিটার অংশের জমি অধিগ্রহণ ও নির্মাণকাজ অনেক দূর এগিয়েছে। এখন ৬৫০ মিটার অংশের অধিগ্রহণসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় বাবদ আরও ১১৩ কোটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) বগুড়ার সভাপতি মাসুদার রহমান বলেন, ‘সড়কটি অনেক আগেই নির্মাণ হওয়া দরকার ছিল। ১৩ কোটি টাকার প্রকল্প ১৭ বছর ধরে ঝুলিয়ে রেখে রাষ্ট্রের বিপুল অর্থ এভাবে অপচয় করাটাও একধরনের দুর্নীতি।’

বগুড়া-৬ (সদর) আসনের সাংসদ ও বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম মো. সিরাজ বলেন, বগুড়ার প্রতি বর্তমান সরকারের অবহেলা, বঞ্চনার সবচেয়ে বড় উদাহরণ এই সড়ক নির্মাণ প্রকল্প। সরকার দেশে সুষম উন্নয়ন করছে, তবে বগুড়াকে বাদ দিয়ে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরও প্রকল্পের কাজ এখনো শেষ হয়নি। ১৭ বছর ধরে প্রকল্পটি ঝুলিয়ে রেখে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি করা হয়েছে।