কাদের মির্জার কার্যালয়ে এক চালককে নির্যাতনের অভিযোগ, ভিডিও ভাইরাল

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভা ভবনে নির্যাতনের শিকার অ্যাম্বুলেন্স চালক মো. শহিদ উল্যাহ। আজ মঙ্গলবার নোয়াখালী শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে
ছবি: প্রথম আলো

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভা ভবনে এক অ্যাম্বুলেন্সচালককে আটকে রেখে নির্যাতন চালানোর অভিযোগ উঠেছে মেয়র আবদুল কাদের মির্জার অনুসারীদের বিরুদ্ধে। গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত ভবনের তৃতীয় তলায় এ নির্যাতন চলে বলে অভিযোগ। কাদের মির্জা বসুরহাট পৌরসভার মেয়র এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই।

নির্যাতনের শিকার অ্যাম্বুলেন্স চালকের নাম মো. শহিদ উল্যাহ (৩৫)। তাঁকে পুলিশ গতকাল সোমবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে বসুরহাট পৌরসভা কার্যালয় থেকে উদ্ধার করে। এরপর তাঁকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতেই নোয়াখালী শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়।

নির্যাতনের শিকার চালক শহিদের কাছ থেকে জোর করে কাদের মির্জার অনুসারীদের আদায় করা বক্তব্য এবং পরে হাসপাতালে স্বেচ্ছায় দেওয়া আরেকটি বক্তব্যের দুটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে একটি ভিডিও প্রচার করেন কাদের মির্জার অনুসারীরা। পরের ভিডিও প্রচার করেন ওবায়দুল কাদেরের অনুসারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদলের অনুসারীরা।

নির্যাতনের শিকার মো. শহিদ উল্যাহ উপজেলার চর কাঁকড়া এলাকার সোলেমান মিয়ার ছেলে। তিনি বসুরহাট পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের হাসপাতাল গেট থেকে জনসেবা অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস নামে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। তিনি শ্রমিক লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

শহিদ উল্যাহর ভাষ্য, গত বৃহস্পতিবার উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আ জ ম পাশা চৌধুরীদের (সাবেক সাংসদ আবু নাছের চৌধুরী) বাড়িতে কাদের মির্জার অনুসারীরা হামলা চালান। ওই ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে আনা-নেওয়ার পর থেকে কাদের মির্জা ও তাঁর লোকজন তাঁকে চাপ দিচ্ছিলেন যে প্রতিপক্ষ মিজানুর রহমানের অনুসারীরা অ্যাম্বুলেন্সে অস্ত্র নিয়েছে—এমন তথ্য দিয়ে একটি মামলা করার জন্য। তিনি রাজি না হওয়ায় গতকাল বিকেলে তাঁকে পৌর ভবনে ডেকে পাঠানো হয়।

অ্যাম্বুলেন্সচালক শহিদ উল্যাহ অভিযোগ করেন, ‘পৌরসভা ভবনে গেলে কাদের মির্জার অনুসারী মানিক, শাহাদাত ও আরিফ প্রথমে আমাকে বেধড়ক মারধর করেন। রড দিয়ে মেরে একটি হাত ভেঙে দেন। তিনজন বলতে থাকেন, তোকে মেরে ফেলার অর্ডার। নির্যাতন সহ্য না করতে পেরে আমি চিন্তা করি সুইসাইড করার। আমাকে তাঁরা বলে মামলা করতে হবে। যদি মামলা করো, বলব তুমি সঠিক আছ। মামলা না করলে বলুম তুমি অপশক্তির (প্রতিপক্ষ) সাথে আছ।’
কাদের মির্জার অনুসারীদের ধারণ করা ভিডিওতে শহিদকে বলতে শোনা যায়, ‘গত বৃহস্পতিবার উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আ জ ম পাশা চৌধুরীদের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটলে অ্যাম্বুলেন্সে করে কাদের মির্জার প্রতিপক্ষ সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলের অনুসারীরা অস্ত্র আনা-নেওয়া করেছে।’

অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য আজ মঙ্গলবার সকালে মেয়র আবদুল কাদের মির্জার মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়ে ব্যস্ত পাওয়া যায়। পরে অন্য আরেকটি নম্বর থেকে কল করা হলে এক ব্যক্তি ফোন ধরেন। পরিচয় দেওয়ার পর ‘মেয়র মহোদয় ব্যস্ত আছেন’ বলে ফোন কেটে দেন। পরে কাদের মির্জা ‘ঘোষিত’ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইউনুছের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না। তা ছাড়া আজ সকাল থেকে তিনি পৌরসভায় যাননি।

আরেকটি ভিডিওতে শহিদকে বলতে শোনা যায়, তাঁর কাছ থেকে জোর করে এসব বক্তব্য নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে কাদের মির্জার প্রতিপক্ষ ওবায়দুল কাদেরের ভাগনে উপজেলা আওয়ামী লীগের মুখপাত্র মাহবুবুর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাদের মির্জার নির্দেশে তাঁর অনুসারীরা নিরীহ অ্যাম্বুলেন্সচালককে ডেকে নিয়ে আটকে রেখে নির্যাতন করে আমাদের ছেলেদের ফাঁসানোর জন্য মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করে। এর আগেও একাধিক ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা–কর্মীকে তাঁর অনুসারীরা ডেকে নিয়ে পৌরসভা ভবনের টর্চার সেলে আটকে রেখে নির্যাতন করে।’

অ্যাম্বুলেন্স চালককে পৌরসভা ভবনে আটকে রেখে নির্যাতনের বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুদ্দিন আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, পৌরসভা থেকে থানায় খবর দেওয়া হয় ওই অ্যাম্বুলেন্সচালকের কাছ থেকে তাঁদের আদায় করার বক্তব্যের আলোকে অভিযান চালানোর জন্য। পুলিশ পৌর কার্যালয়ে অভিযানে যায়। পুলিশ অ্যাম্বুলেন্সচালককে উদ্ধার করে। জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি বলেন যে মেয়রের লোকজন তাঁকে মারধর করে স্বীকারোক্তি আদায় করেছেন। এ সময় অসুস্থ দেখে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় তিনি অভিযোগ দিলে তদন্ত করে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।