কারখানা খোলার খবরে গাজীপুরে দুই মহাসড়কে রাত থেকে ভিড় বেড়েছে

গাজীপুরে মহাসড়কে মানুষের ভিড় বাড়ছে
ফাইল ছবি

শুক্রবার রাত ১০টা। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় একটি ট্রাক থেকে ২৫ থেকে ২৬ জন যাত্রী নেমে এলেন। তাঁদের মধ্যে আছেন নারী ও শিশু। এ দলে থাকা কারখানার শ্রমিক রবিউল ইসলাম বলেন, কারখানা খুলে দিচ্ছে। মহাসড়কে গণপরিবহন নেই। বাধ্য হয়ে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে ট্রাকে করে কর্মস্থলে ফিরছেন তিনি। সিরাজগঞ্জ থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত তাঁর ভাড়া নিয়েছে ৫০০ টাকা।

ওই ট্রাকের চালক আবদুল আলীমের ভাষ্য, তিনি এক সপ্তাহ ধরে রাতে সিরাজগঞ্জ থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত যাত্রী নিয়ে আসছেন। ভাড়া বেশি, তাই তাঁর আয়ও বেশি। রাতের বেলায় পুলিশের ঝামেলাও একটু কম। যমুনা সেতু ও মির্জাপুর এলাকায় পুলিশ আটকেছিল। দুই জায়গায় ২০০ টাকা দিতে হয়েছে।

ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ, দুই মহাসড়কে রাতের বেলায় ট্রাক, পিকআপ ভ্যান ও অ্যাম্বুলেন্স যাত্রী নিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছে। এসব পরিবহন ভাড়া বেশি নিচ্ছে বলে যাত্রীদের অভিযোগ। কর্মস্থলে ফেরার তাগিদে তাঁরাও বাড়তি ভাড়া দিয়ে গাজীপুর, ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় যাচ্ছেন।

ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে চলমান কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেই তৈরি পোশাকসহ সব রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা আগামীকাল রোববার থেকে খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে চলমান বিধিনিষেধে শ্রমিকেরা দূর থেকে কীভাবে কর্মস্থলে ফিরবেন, তার কোনো নির্দেশনা নেই। আর কারখানা খুলে দেওয়ার খবর পেয়ে মানুষ যে যেভাবে পারছে, গ্রাম থেকে ফিরে আসছে।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় গতকাল শুক্রবার রাত ১০টার দিকে বৃষ্টি হচ্ছিল। এর মধ্যে তিনটি ট্রাক ও একটি পিকআপ ভ্যান রাস্তার পাশে যাত্রীদের থামিয়ে দেয়। ট্রাকটি ত্রিপল দিয়ে ঢাকা ছিল। কিছু সময় পর ট্রাকের সহযোগী ট্রাকের ত্রিপল সরিয়ে নেন। তখন ট্রাক থেকে একে একে ২৫ থেকে ২৬ জন যাত্রী নেমে আসেন। ত্রিপল দিয়ে ঢাকা থাকলেও অনেকে বৃষ্টিতে ভিজে একেবারে নাজেহাল অবস্থা। এ ছাড়া রাতের বেলায় পণ্যবাহী যত যানবাহন আছে, সেগুলো যাত্রী পরিবহন করে। অ্যাম্বুলেন্সেও যাত্রীদের আনতে দেখা গেছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা মনির হোসেন বলেন, বাড়ি থেকে চন্দ্রা ত্রিমোড় আসতে প্রায় দুই হাজার টাকা খরচ হয়েছে তাঁর। তিনি শিবগঞ্জ থেকে অটোরিকশায় করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ এসেছেন। সেখান থেকে একটি পিকআপ ভ্যানে উঠে এসেছেন রাজশাহী। এরপর বেশ কিছুটা পথ হাঁটেন। পরে তিনি তিনটি ট্রাক পরিবর্তন করে রাত সাড়ে নয়টায় চন্দ্রায় এসে পৌঁছান। তিনি যাবেন কোনাবাড়ীর নতুন বাজার এলাকায়।

বগুড়ার শাহজাহানপুরের আমরুল এলাকার আসিয়া আক্তার ও আসমা আক্তার দুই বোন চাকরি করেন আশুলিয়ার জিরাব এলাকার একটি কারখানায়। আসিয়া আক্তার বলেন, ‘লকডাউন দিয়েছে, আবার কারখানাও খুলে দিয়েছে। দিনের বেলায় আসাও যায় না। তাই বিকেলে রওনা দিয়েছিলাম। অনেক কষ্ট করে ট্রাকে উঠে চন্দ্রা এসেছি। এখন বাকি পথ রিকশা নিয়ে চলে যাব।’

অন্যদিকে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে মানুষের ভিড় আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত যানবাহন চলাচল কম থাকলেও বিকেলের পর থেকে যানবাহন চলাচল বেড়ে গেছে। ওই মহাসড়কেও ট্রাক, পিকআপ ভ্যান ও অ্যাম্বুলেন্সে যাত্রী চলাচল করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিল্পকারখানা খুলে দেওয়ার খবর প্রচার হলে সন্ধ্যার পর থেকে কর্মস্থলে ফেরা মানুষের ভিড় অনেক বেড়ে যায়। ওই পথে মানুষ যে যেভাবে পারছে ছুটছে। বহু মানুষ চান্দনা চৌরাস্তা এলাকা হেঁটে পাড়ি দিচ্ছে।

কোনাবাড়ী হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর গোলাম ফারুকের দাবি, ট্রাকে-পিকআপ ভ্যানে কাউকে আসতে দেখেননি। এলেও পুলিশের চেকপোস্টের আগেই তাঁরা নেমে যাচ্ছেন হয়তো। তবে কারখানা খোলার খবরে সন্ধ্যার পর থেকে মানুষের ভিড় অনেক বেড়েছে।