কারখানা গুঁড়িয়ে দিয়ে ‘শিশুপার্কের’ সাইনবোর্ড টাঙালেন কাদের মির্জা

আসবাব কারখানা গুঁড়িয়ে দেন মেয়র আবদুল কাদের মির্জার অনুসারী ও পৌরসভার কর্মীরা। আজ শুক্রবার সকালে নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার করালিয়া এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার বিরুদ্ধে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে একটি আসবাব কারখানা ও স মিল গুঁড়িয়ে দিয়ে জায়গা দখলের অভিযোগ উঠেছে। আজ শুক্রবার সকালে বসুরহাট পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের করালিয়া এলাকায় (সারের গুদাম) এ ঘটনা ঘটে। এতে ‘হুমায়ুন টিম্বার মার্সেন্ট অ্যান্ড স মিল’ নামের প্রতিষ্ঠানটির কয়েক কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে দাবি মালিকপক্ষের।

অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে আবদুল কাদের মির্জার মুঠোফোনে আজ শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া ছয়টায় একাধিকবার ফোন দিলে ব্যস্ত পাওয়া যায়। খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি কোনো জবাব দেননি। পরে অন্য একটি নম্বর থেকে যোগাযোগ করা হলে ফোন ধরেন কাদের মির্জা। প্রথম আলোর প্রতিবেদকের পরিচয় পেয়েই তিনি ফোন কেটে দেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সকাল ছয়টার দিকে কাদের মির্জার নেতৃত্বে তাঁর বেশ কিছু অনুসারী ও পৌরসভার কর্মী হুমায়ুন টিম্বার মার্সেন্ট অ্যান্ড স মিলে যায়। তাঁরা দুটি এক্সকাভেটর দিয়ে ভেতরের বিভিন্ন মালামাল গুঁড়িয়ে দেন। পরে মেয়রের অনুসারীরা সেখানে ‘শিশুপার্কের জন্য নির্ধারিত স্থান’ লেখাসংবলিত একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেন।

তিনি কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), জেলা পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসককে ফোন করে ঘটনাটি অবহিত করেন এবং আইনগত সহায়তা চান। কিন্তু প্রশাসনের লোকজন তাঁর সহযোগিতায় এগিয়ে আসেননি।
কারখানার মালিক ফিরোজ আলম

কারখানার মালিক ফিরোজ আলম অভিযোগ করেন, তাঁরা ১৯৯০ সাল থেকে করালিয়া মৌজার ডিএস ১৩৩ নম্বর খতিয়ানের ৫৫৮ নম্বর দাগের ১৭ শতাংশ জমির ক্রয়সূত্রে মালিক। জমি কেনার পর তাঁরা সেখানে ‘হুমায়ুন টিম্বার মার্সেন্ট অ্যান্ড স মিল’ প্রতিষ্ঠা করেন। সম্প্রতি বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আকস্মিকভাবে ওই জমি ‘খাস’ দাবি করেন এবং জমি থেকে তাঁদের স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা দেন।

ফিরোজ আলম জানান, ওই আদেশের বিরুদ্ধে তাঁরা জেলা জজ আদালতে গত ২৫ মার্চ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। আদালত মামলা আমলে নিয়ে বিরোধীয় ভূমিতে বিবাদী পক্ষের প্রবেশে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। কিন্তু আদালতের আদেশ অমান্য করে কাদের মির্জার নেতৃত্বে প্রায় ২০০ অনুসারী ও পৌরসভার এক্সকাভেটর মেশিন গিয়ে তাঁদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানটি ভাঙচুর করে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এ সময় তাঁরা প্রতিষ্ঠানের মূল্যবান কাঠসহ অনেক মালামাল পৌরসভার গাড়ি বোঝাই করে নিয়ে যান।

ফিরোজ আলমের অভিযোগ, মেয়র আবদুল কাদের মির্জার নেতৃত্বে চলা প্রায় তিন ঘণ্টার তাণ্ডবলীলায় তাঁর প্রতিষ্ঠানের কয়েক কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। ঘটনার পর তিনি কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি), জেলা পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসককে ফোন করে ঘটনাটি অবহিত করেন এবং আইনগত সহায়তা চান। কিন্তু প্রশাসনের লোকজন তাঁর সহযোগিতায় এগিয়ে আসেননি।

কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুদ্দিন আনোয়ার বলেন, তাঁকে প্রতিষ্ঠানটির মালিক ফোনে ঘটনাটি জানানোর পর তিনি পুলিশ পাঠিয়ে মেয়রকে আদালতের নিষেধাজ্ঞার বার্তাটি পৌঁছান। এরপর পুলিশ সেখান থেকে চলে আসে। তবে এ ঘটনার বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষটি থানায় কোনো অভিযোগ করেনি।

ফিরোজ আলমের বড় ভাই হুমায়ুন কবিরকে ২ সেপ্টেম্বর দেওয়া পৌরসভার চিঠিতে বলা হয়, ‘আপনি সরকারি খাস সম্পত্তির ওপর বিধিবহির্ভূতভাবে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। জনস্বার্থে উক্ত জায়গার ওপর বসুরহাট পৌরসভার শিশুপার্ক নির্মাণের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। নোটিশ প্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে আপনার বিধিবহির্ভূত স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য পুনর্নির্দেশ দেওয়া হলো।’ এর আগে গত ২২ মার্চ একই বিষয়ে আরেকটি নোটিশ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং স্থাপনা সরিয়ে না নিলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে।

জায়গাটি খাস সম্পত্তি কি না, তা জানার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিয়াউল হক মীরকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান প্রথম আলোকে বলেন, বসুরহাটের ওই জায়গাটি খাস কি না, কাগজপত্র না দেখে বলা যাবে না। তবে কিছুদিন আগে পৌরসভা থেকে একটি শিশুপার্ক নির্মাণের প্রস্তাব তাঁর কাছে পাঠানো হয়েছিল। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ইউএনওকে ওই প্রস্তাবের চিঠিটি পাঠিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু মেয়রের প্রস্তাবিত শিশুপার্কের স্থান কোনটি, তা তিনি এই মুহূর্তে বলতে পারছেন না।