কালিহাতীতে যমুনার ভাঙনে দুই শতাধিক বাড়িঘর বিলীন

টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার ভৈরববাড়ী গ্রামের ঘরবাড়ি যমুনার ভাঙনে নদীতে বিলীন হচ্ছে
ছবি: প্রথম আলো

যমুনা নদীর ভাঙনে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার দুটি গ্রামের দুই শতাধিক ঘরবাড়ি, হাট, স্কুল, মাদ্রাসা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে গৃহহীন হয়ে পড়েছে ওই দুই গ্রামের দুই শতাধিক পরিবার।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, গত জুলাইয়ের শেষ দিকে বঙ্গবন্ধু সেতুর প্রায় তিন কিলোমিটার দক্ষিণে নতুন ধলেশ্বরী নদীর উৎসমুখের পর থেকে কয়েকটি গ্রামে এ ভাঙন শুরু হয়। তবে কালিহাতীর দুর্গাপুর ইউনিয়নের ভৈরববাড়ী ও গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়নের আলীপুর গ্রাম দুটি ভাঙনে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ভাঙনকবলিত ওই গ্রাম দুটিতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িঘর হারিয়ে লোকজন আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয়স্বজনের বাড়ি বা রাস্তার পাশে।

ভৈরববাড়ী গ্রামের আবদুল আজিজ প্রামাণিক বলেন, গত মাসে তাঁর ঘরবাড়ি, মুরগির খামার—সব নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সব হারিয়ে তিনি এখন নিঃস্ব হয়ে গেছেন। আশ্রয় নিয়েছেন এক আত্মীয়ের বাড়িতে। একই গ্রামের শাহজাহান মিয়া বলেন, হঠাৎ ভিটেমাটি হারিয়ে তিনি পথে বসেছেন। ঘরবাড়ি সবই ছিল, কিন্তু ভাঙনের ফলে আজ তাঁর কিছুই নেই। সোহেল মিয়া জানান, বাপ–দাদার ভিটা হারিয়ে এখন পথে পথে ঘুরতে হচ্ছে আশ্রয়ের জন্য।

আলীপুর বাজারের মনিহারি দোকানের মালিক সুজন মিয়া বলেন, তাঁর দোকান দুই সপ্তাহ আগে নদীতে ভেঙে গেছে। এখন পাশেই অস্থায়ীভাবে কোনোমতে দোকান চালাচ্ছেন। তাঁর মতো আরও অন্তত ২০ ব্যবসায়ীর দোকান নদীতে চলে গেছে।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, প্রতিদিনই ঘরবাড়ি ভাঙছে। তাই ওই এলাকায় ভাঙনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভাঙন প্রতিরোধে গাইড বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।

সরেজমিন দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে দক্ষিণ দিকে গাইড বাঁধ রয়েছে। পরে পাউবো ধলেশ্বরীর উৎসমুখ পর্যন্ত গাইড বাঁধ নির্মাণ করেছে। গাইড বাঁধের পরের অংশে ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে গাইড বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন জানান, ভৈরববাড়ী গ্রামের প্রায় দেড় শ পরিবার গত এক মাসে গৃহহীন হয়ে পড়েছে। ঘরবাড়ি হারিয়ে লোকজন আশ্রয় নিয়েছেন আশপাশের বিভিন্ন এলাকায়।

গোহালিয়াবাড়ীর ইউপি চেয়ারম্যান হযরত আলী জানান, আলীপুর গ্রাম ও আশপাশে ৫০টি বাড়ি এবার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া আলীপুর বাজার, আলীপুর দাখিল মাদ্রাসা এবং বেলটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন ভাঙনে যমুনার গর্ভে চলে গেছে।

ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার ও হযরত আলী বলেন, গাইড বাঁধ নির্মাণ না করা হলে আলীপুর, ভৈরববাড়ী গ্রামসহ এ এলাকার অনেক গ্রামই মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ভাঙনকবলিত পরিবারগুলোকে পাঁচ হাজার করে নগদ টাকা ও দুই দফায় খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়েছে।

পাউবো সূত্রে জানা যায়, ভাঙন প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে ওই সব এলাকায়।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সাংসদ হাসান ইমাম খান জানান, বঙ্গবন্ধু সেতুর নদীশাসন এলাকার পর থেকে আড়াই কিলোমিটার গাইড বাঁধ হয়েছে। এখন কালিহাতী উপজেলার প্রায় এক কিলোমিটার বাকি রয়েছে। এই অংশটুকু গাইড বাঁধ নির্মাণের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে।