কুঁকড়ে যাচ্ছে তরমুজগাছ

জেলায় তরমুজখেত রোগাক্রান্ত হয়েছে দুই হাজার হেক্টরে। এর মধ্যে রাঙ্গাবালীরই এক হাজার হেক্টর।

তরমুজগাছের কচি পাতা কুঁকড়ে গেছে। ফলে গাছে ফল আসছে না। গতকাল সকালে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার কাজীরহাওলা গ্রামেছবি: প্রথম আলো

নাসির খান (৪০) কয়েক বছর ধরে তরমুজের আবাদ করছেন। লাভজনক হওয়ায় এ বছরও দুই একর জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন। এবার বীজ থেকে চারা ভালোই হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ তরমুজগাছ কুঁকড়ে গেছে। গাছ আর বাড়ছে না এবং তরমুজও হচ্ছে না। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন তিনি।

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার রাঙ্গাবালী ইউনিয়নের কাজীর হাওলা গ্রামে কৃষক নাসির খানের বাড়ি। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, নাসির খান তাঁর তরমুজখেতে বসে আছেন। তিনি বলেন, গত বছর তিনি এক একর জমিতে তরমুজ আবাদ করেছিলেন। খরচ হয়েছিল ৪০ হাজার টাকা। খেত থেকেই তরমুজ বিক্রি করেছিলেন আড়াই লাখ টাকায়। এ বছর তিনি দুই একর জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন। খরচ হয়েছে ৮৫ হাজার টাকা।

নাসির খান আরও বলেন, ‘এ বছর ভেবেছিলাম, কমপক্ষে তিন লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করুম। কিন্তু খেতে যে রোগ লাগছে, তা কেউ জানে না। তরমুজগাছগুলো কুঁকড়ে যেতে ধরেছে। আগা শক্ত হয়ে গেছে। তরমুজ হইবে কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’

নাসির খানের মতো রাঙ্গাবালী উপজেলার অনেক তরমুজচাষি দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পটুয়াখালী কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ বছর ২২ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি হয়েছে রাঙ্গাবালীতে ৯ হাজার ৪৪৯ হেক্টর ও গলাচিপায় ৯ হাজার ৫০৫ হেক্টরে। তরমুজখেত রোগাক্রান্ত হয়েছে দুই হাজার হেক্টরে। এর মধ্যে রাঙ্গাবালীরই এক হাজার হেক্টর।

তরমুজগাছগুলো কুঁকড়ে যেতে ধরেছে। আগা শক্ত হয়ে গেছে। তরমুজ হইবে কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
নাসির খান, তরমুজ চাষী

এ সম্পর্কে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পটুয়াখালীর উপপরিচালক এ কে এম মহিউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, আবহাওয়ার বিরূপ আচরণ, দিনে ও রাতে তাপমাত্রার ব্যাপক পার্থক্যের কারণে তরমুজখেতে রোগ ও পোকামাকড়ের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। তিনি সরেজমিন তরমুজখেত পরিদর্শন করেছেন। খেতে জাব পোকা, থ্রিপসজাতীয় শোষক পোকা ও মাকড়জাতীয় পোকার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এ কারণে তরমুজগাছের কচি পাতা কুঁকড়ে যাচ্ছে।

এ কে এম মহিউদ্দিন আরও বলেন, আক্রান্ত এলাকার কৃষকদের কীটনাশক ও মাকড়নাশক ওষুধ ছিটানোর পরামর্শসংবলিত প্রচারপত্র বিতরণ করা হচ্ছে। খেতে যে তরমুজগাছ আক্রান্ত হয়েছে, তা তুলে মাটিতে পুঁতে ফেলারও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এতে রোগ ছড়ানো কমবে।

রাঙ্গাবালী ইউনিয়নের কাজীর হাওলা গ্রামের শাখাওয়াত দফাদার (৩৫) এ বছর আড়াই একর জমিতে তরমুজ আবাদ করেছেন। ইতিমধ্যে তাঁর ১ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে তরমুজগাছ কুঁকড়ে গেছে। বিষয়টি তাঁরা কৃষি বিভাগকে জানিয়েছেন। কৃষি বিভাগ থেকে নানা পরামর্শ দিলেও তা কাজে আসছে না।

খেতে জাব পোকা, থ্রিপসজাতীয় শোষক ও মাকড়জাতীয় পোকা পাওয়া গেছে।
এ কে এম মহিউদ্দিন, উপপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পটুয়াখালী কার্যালয়

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, তরমুজখেত রোগাক্রান্ত হওয়ার পর জেলার আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের একটি দল তরমুজখেত পরিদর্শন করেছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।

রোগাক্রান্ত তরমুজখেত পরিদর্শন করেছেন জেলার আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ইফতেখার মাহমুদ। তিনি বলেন, রাঙ্গাবালীতে তরমুজগাছের কাণ্ড ফেটে রস নির্গত হওয়া, কাণ্ড কালো হয়ে যাওয়া, গাছ ঢলে পড়া দেখা গেছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এক জমিতে এক ফসল বারবার ফলালে রোগবালাই বেশি হয়, পোকামাকড়ের উপদ্রব দেখা দেয়। শস্য আবর্তন করে চাষাবাদ করলে খেতে রোগবালাই কম হবে।

পটুয়াখালীতে প্রতিবছরই তরমুজের আবাদ বাড়ছে। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত বছর জেলায় ১৪ হাজার ৮২২ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছিল। এ বছর জেলায় তরমুজ আবাদ হয়েছে ২২ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে।