কুমিল্লায় মারা যাওয়া কিশোরীর ময়নাতদন্ত পঞ্চগড়ে, বিচারের দাবিতে সড়ক অবরোধ
পঞ্চগড় পৌরসভার এক কিশোরীর (১৪) কুমিল্লায় নানির বাড়িতে রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। সে আত্মহত্যা করেছে বলে দাবি করে তার লাশ পঞ্চগড়ের বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন তার নানি। তবে লাশ পৌঁছে দেওয়ার পর থেকেই তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। আজ বুধবার দুপুরে নিহত কিশোরীর লাশ পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে পঞ্চগড় সদর থানা-পুলিশ।
নিহত কিশোরীর বাড়ি পঞ্চগড় পৌরসভার রামের ডাঙ্গা এলাকায়। মা–বাবার বিবাহবিচ্ছেদের পর প্রায় চার বছর ধরে সে কুমিল্লায় তার মায়ের খালার বাড়িতে থাকত।
এদিকে ওই কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে দাবি করে তার হত্যার বিচারের দাবিতে বুধবার দুপুরে পঞ্চগড় শহরে প্রায় আধঘণ্টা পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন তার প্রতিবেশীরা। পরে পুলিশ ও পঞ্চগড় সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী আল তারিকের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
ওরা আমার মেয়েকে মেরে ফেলে এখন আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছে। আমার মেয়ে যদি ফাঁসি লাগিয়ে মারা যায়, তাহলে তার শরীরে এত দাগ কেন? আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে একটি অ্যাম্বুলেন্সযোগে ওই কিশোরীর লাশ বাড়িতে নিয়ে আসেন কিশোরীর মায়ের খালা (নানি) । গত সোমবার বিকেলে কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার শাকতলা-ব্যাপারীবাড়ি এলাকায় তাঁদের বাড়িতে ঘরের আড়ার সঙ্গে গলায় দড়ি দিয়ে ওই কিশোরী আত্মহত্যা করেছে বলে দাবি করেন তার নানি।
পরে স্থানীয় লোকজন পঞ্চগড় সদর থানায় খবর দিলে পুলিশ সেখানে লাশের প্রাথমিক সুরতহাল করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। মঙ্গলবার রাতেই ওই কিশোরীর বাবা পঞ্চগড় সদর থানায় একটি অপমৃত্যু (ইউডি) মামলা করেছেন। সেই সঙ্গে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি তদন্তের জন্য জানিয়েছে পঞ্চগড় সদর থানা-পুলিশ।
শরীরের বিভিন্ন স্থানে সিগারেটের আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার মতো দাগ দেখেছি। ওর পায়ে আঘাতের চিহ্ন দেখছি। আমার বিশ্বাস, আমার ভাতিজিকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। আমরা এই হত্যার বিচার চাই।
ওই কিশোরীর বাবা বলেন, ‘ওরা আমার মেয়েকে মেরে ফেলে এখন আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছে। আমার মেয়ে যদি ফাঁসি লাগিয়ে মারা যায়, তাহলে তার শরীরে এত দাগ কেন? আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।’
পঞ্চগড় সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী আল তারিক বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে, ওই কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এভাবে গরিব একটা মেয়েকে হত্যা করা হবে আর লাশ বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে, তা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা পুলিশকে অনুরোধ করার পর পুলিশ এ বিষয়ে নানা পদক্ষেপও নিয়েছে। আমরা এ ঘটনার সঠিক তদন্ত চাই।’
লাশ নিয়ে আসার পর ওই কিশোরীর নানি পুলিশকে বলেন, সোমবার বিকেলে তিনি বাড়িতে ছিলেন না। এ সময় তাঁর নাতনি নাকি বাড়ির একটা গাছে উঠে আম পেড়ে খেয়েছে। এ সময় তাঁর ছোট মেয়ে ওকে বলেছে, ‘তুমি আম পেড়েছ কেন? তোমার নানি আসুক বলে দেব।’ এরপরই সে ঘরে ঢুকে গলায় ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু আককাস আহমদ বলেন, ‘ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানা এলাকায়। ওই কিশোরীর মৃত্যুর পর তাঁরা সেখানকার পুলিশকে জানায়নি। বিষয়টি আমরা জানতে পেরে চৌদ্দগ্রাম থানা-পুলিশকে জানিয়েছি। তারা সেখানে তদন্ত করছে। লাশের প্রাথমিক সুরতহালে গলায় দাগ পেয়েছি। এ ছাড়া তাকে ধর্ষণ বা হত্যা করা হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হতে লাশের ময়নাতদন্ত করেছি। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলেই মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। এ ঘটনায় আমরা থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা নিয়েছি।’