কুড়ানো আলুতে মেটে টুকিটাকি প্রয়োজন

আলু তোলা শেষে এখন কৃষকেরা অন্য ফসল আবাদের জন্য লাঙল দিয়ে জমি প্রস্তুত করছেন। লাঙলের ফলার টানে বেরিয়ে আসছে ভেতরে থাকা আলু।

লাঙলের ফলার টানে উঠে আসছে মাটির ভেতরে চাপা পড়ে থাকা আলু। আর লাঙলের পিছু পিছু ছুটে সেসব আলু সংগ্রহ করে ব্যাগে পুরছে একদল শিশু-কিশোর। তাদের একজন আল আমিন (১১)। সে বলে, ‘আলু বিক্রি করে যে কয়টা টাকা পাই, তা জমিয়ে রাখব। সামনে ঈদ। আলু বিক্রির এই টাকা দিয়ে নতুন কাপড় কিনব।’

আল আমিন ঠাকুরগাঁওয়ের আকচা এলাকার কাজীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। কৃষকেরা বলেন, তাঁরা খেতের আলু শ্রমিক দিয়ে তুলে সংরক্ষণ করেন। আলু তোলার সময় কিছু কিছু আলু মাটিতে চাপা পড়ে থাকে। আলু তোলা শেষে এখন তাঁরা অন্য ফসল আবাদের জন্য লাঙল দিয়ে জমি প্রস্তুত করছেন। সে সময় লাঙলের ফলার টানে বেরিয়ে আসছে ভেতরে থাকা আলু। আর শিশু-কিশোরেরা দল বেঁধে ওই আলু কুড়িয়ে নিচ্ছে। কোথাও কোথাও শিশুদের সঙ্গে তাদের মায়েরাও আছেন।

আলু বিক্রি করে যে কয়টা টাকা পাই, তা জমিয়ে রাখব। সামনে ঈদ। আলু বিক্রির এই টাকা দিয়ে নতুন কাপড় কিনব। আর কিছু থাকলে টুকিটাকি কিনব।
আল আমিন, আকচা এলাকার বাসিন্দা

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ২৭ হাজার ৬৭৭ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে। আর এ থেকে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৬ লাখ ৭৯ হাজার ৭৯৮ মেট্রিক টন।

সদরের আকচা, ঢোলারহাট, রুহিয়া ও আখানগর এলাকায় কথা হয় আলু সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত আল আমিন, শাহাদাত, সবুজ, প্রতিমা ও ফারজানার সঙ্গে। তাদের সবার বয়স ৬ থেকে ১২ বছর। কেউ কেউ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আবার কেউ অভাব-অনটনে পড়ে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছে।

ঢোলারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রতিমা রায় (১০) বলে, ‘প্রতিদিনের আলু নিয়ে মায়ের কাছে জমা দিই। সেগুলো বিক্রি করে অনেক সময় নিজের টুকিটাকি জিনিস কিনে নিই।’

অভাব-অনটনে পড়ে ছেলেমেয়ের পড়ালেখার খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন আখানগর এলাকার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম। মেয়ে শারমিন আকতার (১২) বলে, বাবা খাতা-কলম কিনে দিতে পারেন না। আলু বিক্রি করে যে টাকা পাবে, তা রেখে দেবে। যখন খাতা–কলম কেনার দরকার হবে, কিনতে পারবে।

আলু কুড়াতে ব্যস্ত আরাফাত (১০) বলে, আলু সংগ্রহ করতে গিয়ে খেতের মালিকের বকাঝকাও তাদের কপালে কম জোটে না। তখন তাদের খারাপ লাগে। তবে তারা পিছু হটে না।

আখানগরের মাধবপুর এলাকায় দেখা গেল, শিশুদের সঙ্গে নারীরাও খেত থেকে আলু সংগ্রহ করছেন। ফজিলা বেগম (৪৩) বলেন, ‘গরিবের সংসার। জমিত মজুরি দিয়া সংসার চালাও। দুই দিন ধরিয়া কাজ পাওনি। তাই ছোয়ালাক ধরিয়া আলু কুড়াছি। এইলা খামো আর কপালত বেশি আলু জুটিলে বিক্রি করিয়া সংসারের খরচ করিমো।’

ঢোলারহাটের আলুচাষি আবদুল জব্বার বলেন, খেত থেকে আলু তোলা শেষ। এখন ভুট্টার জন্য জমি তৈরি করছেন। এ সুযোগে গ্রামের শিশুরা মাটির নিচে চাপা থাকা আলু বের করে নেয়। এতে তাঁদের কোনো ক্ষতি নেই। তারা সেসব আলু বিক্রি করে পড়ালেখার খরচের পাশাপাশি টুকিটাকি প্রয়োজন মেটাবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আবু হোসেন বলেন, খেত থেকে আলু তোলা প্রায় শেষ। এখন কৃষকেরা সেসব খেতে অন্য ফসলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এর ফাঁকে শিশুরা মাটির নিচে থেকে যাওয়া আলু সংগ্রহে নেমেছে। এতে যদি তাদের উপকার হয়, তাহলে কৃষকদের উচিত তাদের বাধা না দেওয়া।